মানুষের পাশে ‘প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি’
কয়েকজন প্রাক্তন বুয়েটের ছাত্র যারা উচ্চতর পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে গেছেন তারা দেশের অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে গড়ে তুলেছেন ‘প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি’ নামে একটি সংগঠন। দেশের ক্রান্তিলগ্নে বিভিন্ন সময়ে অসহায় মানুষের জন্য তারা নানা রকম সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
দেশের এই সংকটের সময়ে করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়মিতভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রদত্ত স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বার্তাগুলো মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে গ্রামপর্যায়ে ব্যানার সাঁটানো, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং এবং স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণের কাজ শুরু করে।
মার্চ মাসের শেষের দিকে যখন স্বাস্থ্যসেবাকর্মী ও চিকিৎসকদের মধ্যে পিপিইর চরম সংকট দেখা দিয়েছিল তখন তারা ডক্টরস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মাধ্যমে ৫৫০টি কমপ্লিট পিপিই বিতরণ করেছেন কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান এবং কিছু বেসরকারি হাসপাতালে।
অভাবী মানুষের জন্য ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে আসছে প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি। তারা এই অঘোষিত লকডাউন ও রমজানে মানুষের খাদ্য চাহিদা বিবেচনায় রেখে প্রতিটি পরিবারে এমন পরিমাণে খাবার দিয়েছে যেন চার-পাঁচজনের একটি ছোট পরিবার এক মাস পর্যন্ত চলতে পারে। এজন্য একটি ফুড প্যাকেজে ২০-২৫ কেজি চাল, ১৫ কেজি আলু, ৩ কেজি ডাল, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি ছোলা ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও কক্সবাজারে মোট এক হাজার ১০০-এর অধিক পরিবারকে একটি ফুড প্যাকেজ দেওয়ার মাধ্যমে চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষের এক মাসের খাদ্যের জোগান দেওয়া হয়েছে। তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কোথাও কোথাও মাথায় করে রাতের আধারে কর্মহীন অভাবী মানুষের ঘরে ঘরে খাবারের বস্তা পৌঁছে দিয়ে এসেছে।
প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি কক্সবাজার ও যশোরে দুইটি ফ্রি ফুড মার্কেট চালু করে। যেখানে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছিল। এই ফ্রি মার্কেট থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিজেদের প্রয়োজন মতো জিনিস নিজেরা গ্রহণ করে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দেওয়া সাহায্য নিয়ে কাজ করছে প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি।
এ সংগঠনটি ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এটি ছয় ধরনের সেবার মাধ্যমে ৭০ হাজার মানুষকে এই পর্যন্ত সেবা প্রদান করেছে। সেবাগুলো হচ্ছে :
১. কমপ্লিট অরফান কেয়ার : চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি এতিমখানায় ২০ জন ছাত্র-ছাত্রীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে।
২. অতি দরিদ্র কর্মজীবী মানুষকে স্বাবলম্বী করা : এ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে ২০০ জন অতি দরিদ্র কর্মজীবী মানুষকে সেলাই মেশিন, গরু, ছাগল, রিকশা ও ভ্যানগাড়ি ইত্যাদি দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
৩. অদম্য মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি : এ পর্যন্ত ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে যাদের অনেকে এখন মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। গত কিছুদিন আগে রিমোনা ও সুমোনা নামে দুজন অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে।
৪. রোহিঙ্গা শরণার্থী সেবা : ২০১৭ সালে বাংলাদেশ যখন নতুন করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমন শুরু হয় তখন বাংলাদেশ সরকারের জরুরি ত্রাণ আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি ২০ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, বাথরুম-টয়লেট, ওয়াটার পাম্প, নলকূপ, এতিমখানা ও রান্নাঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সহায়তায় সেখানে একটি স্কুল পরিচালিত হয় যেখানে ২৫০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে এবং তাদের নিয়মিতভাবে দুই বেলা খাবার দেওয়া হয়। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারত্বের মাধ্যমে এই খাবার দেওয়া হয়ে থাকে।
৫. চিকিৎসা সেবা : চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে কোনো রেজিস্টার্ড ডাক্তার নেই সেখানে তারা রাজশাহী মেডিকেল থেকে প্রতি মাসে ডাক্তার পাঠিয়ে বছরে প্রায় এক হাজার দরিদ্র মানুষকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। এই চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম তিন বছর ধরে নিয়মিতভাবে চলমান।
৬. জরুরি দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণ : বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ, বন্যা, নদী ভাঙন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে কয়েক হাজার মানুষের কাছে ত্রাণ হিসেবে খাদ্যসামগ্রী, কম্বল, ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্যায় ঘর হারানো বা ক্ষতিগ্রস্ত ছয়জন বৃদ্ধাকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এই সেবার মাধ্যমে বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ত্রাণ বিতরণ চলছে।
প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।