মানিকগঞ্জে এবার আড়ম্বরহীন দুর্গাপূজা
দুর্গাপূজা মানেই উৎসব, ঢাকের শব্দ আর নানান সুরের ভক্তিমূলক গানে মুখরিত। সনাতন ধর্মাবম্বলীদের সবচেয়ে বড় উৎসবই হলো দুর্গাপূজা। ৪৭ বছর ধরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরির গঙ্গা মালাকারের বাড়ির পূজা এ অঞ্চলের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বলেই সবাই দেখে আসছে। কিন্তু এবারের পূজা মহামারি করোনায় যেন মলিন হয়ে গেছে।
সাধারণত পূজার এ কদিন কয়েক লাখ দর্শনার্থী ও ভক্তের সমাগমে মুখর থাকে মালাকার বাড়ির দুর্গা মন্দির। এখানে পূজাকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় ছোট আকারের গ্রাম্য মেলার। বসে রকমারি খাবারের দোকান। বিশাল তোরণ আর আলোকসজ্জায় আলোকিত হয় ঐতিহ্যবাহী এই মালাকার বাড়ি। তবে এবার নেই কোনো আলোকসজ্জা, ঢাকের জোরালো শব্দ আর দর্শনার্থীদের ভিড়। বলা যায়, অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে এবারের দুর্গাপূজা।
মালাকার বাড়ির সন্তান অমূল্য মালাকার ঝন্টু এবারের পূজা নিয়ে এনটিভি অনলাইনকে জানান, মালাকার বাড়ির ৪৭ বছরের ঐতিহ্যের এই দুর্গাপূজায় এবার কোনো উৎসব তাঁরা করছেন না। করোনার কারণে সব আনন্দই যেন মলিন হয়ে গেছে।
তবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁরা পূজা করছেন বলেও জানান।
এদিকে, এ জেলার সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন খ্যাত অঞ্চল ঘিওরের অন্য এলাকাতেও দুর্গাপূজা ঢিলেঢালাভাবেই পালন করা হচ্ছে। এখানে গত বছরের মতো দিনভর ঢাকের শব্দ আর শঙ্খের আওয়াজে ঘিওর এলাকা মুখরিত হতে দেখা যায়নি। এবারের পূজা যেন এলাকাবাসীর কাছে প্রাণহীন বলেই মনে হচ্ছে।
খুবই খারাপ লাগছে এবার প্রসাদ বিলাতে পারছি না। ভক্তের সমাগম একেবারেই কম। তবে আশা করব আগামীতে আমরা ঘিওরবাসী আবার আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপূজা করতে পারব। এমনটিই প্রত্যাশা রাখলেন ঘিওরের মণ্ডল বাড়ির ছেলে প্রদীপ কুমার মণ্ডল।
এদিকে, এক দর্শনার্থী শিল্পী রাণী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রতি বছর অনেক মণ্ডপে পূজা হয়। কিন্তু এবার করোনার কারণে তা হচ্ছে না। মনটা খুব খারাপ, ঘুরতে পারছি না। আশা রাখি আবারো উৎসবমুখর পরিবেশে পূজার আনন্দঘন মুহূর্ত পার করতে পারব।’
এ বিষয়ে শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা ঐতিহ্যবাহী ঘিওর এলাকার এ বছরের দুর্গাপূজা উদযাপন সম্পর্কে বলেন, ‘প্রতি বছর এখানে সবার অংশগ্রহণে পূজা উদযাপিত হয়ে থাকে। তবে এবার করোনার কারণে উৎসবের পরিসরটা সীমিতকরণ করা হয়েছে। এ বছর ঘিওরে ৬৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে, যা গতবার ছিল ৭১টি।’
তানিয়া সুলতানা আরো বলেন, ‘প্রতি বছর এখানে দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে একটা জায়গায় মিলিত করা হয় এবং একটা বিরাট উৎসবের মতো হয়। কিন্তু এবার তেমনটা করা হবে না।’
প্রত্যেকেই আলাদাভাবে প্রতিমা বিসর্জন দেবে- স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সঙ্গে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
এ ছাড়া জেলা শহরের প্রধান মন্দির শ্রীশ্রী কালীবাড়ি মন্দির, দাশড়ার কালীখোলা মন্দির, শিববাড়ী, গঙ্গাধরপট্টি, বাজারের লক্ষ্মীমণ্ডপসহ অন্য মন্দিরে করোনার স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ নিয়মে পালন করে দুর্গা প্রতিমা দর্শন করতে দেখা গেছে।
পূজা পালন প্রসঙ্গে কালীবাড়ী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দোলন গোস্বামী বলেন, ‘এবারের পূজাটা ভিন্নভাবে পালন করা হচ্ছে। করোনার কারণে ভক্তেরা খুব একটা বের হচ্ছে না। সেইসঙ্গে মন্দিরে সমাগম যেন না করা হয় তার জন্য সরকারি ২৬টি নিয়ম মেনেই আমাদের পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু মানিকগঞ্জ শহরেই নয়, ঘিওর উপজেলাসহ অন্য জায়গাতেও এবার লোক সমাগম হচ্ছে না। কেননা সবাই স্বাস্থ্য সচেতন, তারা করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে বের হচ্ছে না।’