মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি স্পিডবোট ডুবে যায়। গত সোমবারের (৩ মে) ওই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি স্পিডবোটের মালিক চান মিয়া ওরফে চান্দুকে গতকাল শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গতকাল দিবাগত রাতে র‍্যাব চান মিয়া ওরফে চান্দুকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনায় হওয়া মামলা দুই নাম্বার আসমি তিনি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। যতটুকু তথ্য এখন পর্যন্ত পেয়েছি, তা জানাতে আজ বিকেল ৪টার সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হবে।’

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘মামলা নিয়ে যখন আমরা কাজ শুরু করি, তখন কাগজ-পত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেছি, স্পিডবোটটির কাগজপত্র নেই। এর আগে বোটের চালক শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমি যতটুকু জানি, তিনি এখন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিসাধীন।’

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী পুরাতন ঘাটে বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় স্পিডবোটচালক মো. শাহ আলম (৩১) গাঁজা ও ইয়াবায় নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ।

ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ জানান, দুর্ঘটনার পর আহত স্পিডবোটচালক যখন শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন তাঁর ডোপ টেস্ট করা হয়। নমুনায় তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ আরও জানান, দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চালক মো. শাহ আলমের ডোপ টেস্ট করাতে বলেন। পরে আমরা ঢাকা থেকে কিট এনে ডোপ টেস্ট করি। ডোপ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। নমুনায় গাঁজা ও ইয়াবার অস্তিত্ব মিলেছে। অর্থাৎ, স্পিডবোটটি চালানোর সময় তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন।

গত ৩ মে সকালে কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরোনো ঘাটে পদ্মা নদীতে এ স্পিডবোট ডুবির ঘটনা ঘটে। সেদিন ঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, গত সোমবার সকাল ৭টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৩১ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারের দিকে যাচ্ছিল। বাংলাবাজার ফেরিঘাটের কাছাকাছি এলে নোঙর করা বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়। এতে স্পিডবোটটি সজোরে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাঁতরে তীরে ওঠেন ৫ জন। তাঁদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে এক নারীর মৃত্যু হয়। পরে মরদেহগুলো কাঠালবাড়ী হাজী ইয়াসিন মোল্লাকান্দি দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে রাখা আছে। সেখান থেকে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।