মাদক ব্যবসায়ী ও ওয়েলকাম পার্টিকে প্রত্যাখ্যান করুন : নিক্সন চৌধুরী
ফরিদপুর-৪ (সদরপুর, ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমার যেন বদনাম না হয়, দয়া করে মাদক ব্যবসায়ী ও ওয়েলকাম পার্টির (মুঠোফোনে পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করা) যাঁরা রাতারাতি অবৈধভাবে ধনী হয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানে নেবেন না, যাওয়ারও অনুরোধ করবেন না। তাঁদের প্রত্যাখ্যান করুন।’
‘আমাদের সব উন্নয়নের অর্জন বিলীন হয়ে যাবে, যদি আমাদের সন্তানেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। সমাজকে মাদকমুক্ত করার এখনই উপযুক্ত সময়। মাদক ব্যবসায়ী যে-ই হোক, তার পক্ষে কারো তদবিরকে প্রশ্রয় দেবেন না। ওয়েলকাম পার্টি, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দুদিনেই বাড়িতে বিল্ডিং দেয়। তাদের ব্যাপারে তৃণমূল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ সুপারকে জানান।’
গতকাল শনিবার বিকেলে সদরপুর উপজেলার বাইশরশিতে শিবসুন্দর একাডেমি মাঠে ফরিদপুর পুলিশের ভাঙ্গা সার্কেল আয়োজিত এক মাদকবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিক্সন চৌধুরী এ কথা বলেন।
মাদকের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান পিপিএম (সেবা) একজন সৎ ও যোগ্য পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন সৎ লোক। একই সঙ্গে তিনি তাঁর কর্মস্থলেও কোনো প্রকার অসততা কিংবা অসাধুতার স্থান দেন না। এ জন্য তাঁর নেতৃত্বে ফরিদপুরের মাদক নির্মূলের উপযুক্ত সময় এখনই।’
ফরিদপুর-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি এমপি, আপনি পুলিশ সেটা নয়, ভাই হিসেবে নতুন প্রজন্মকে দেশসেবার সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করব। আপনাদের ভালোবাসায় এই আসনে আমি দুবার নির্বাচিত হয়েছি। পরিবার সন্তানদের আপনারা যেমন সময় দিতে পারেন, আমি কিন্তু পারি না। আপনাদের দেওয়া দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকি, তাতে দুঃখ নেই। যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, আমার পিতার বয়সী ও নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে শিশুরা পর্যন্ত বলে নিক্সন যায়, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার পরিবার তো আপনারাই। ভালোবাসা অর্জন খুব কঠিন কাজ। আমি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালোবাসার মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করে যেতে চাই।’
এ সময় থানাগুলোতে দালাল ও প্রতারকদের উপদ্রবের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের টাউট-বাটপার ও দালাল থেকে থানাগুলোকে মুক্ত রাখতে সচেষ্ট আছি।’
প্রশাসন ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেওয়ার তাগিদ দিয়ে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক নেতারা অপরাধীদের জন্য তদবির না করেন, তাহলে সমাজ থেকে মাদকসহ সব অপরাধ দমন সম্ভব হবে। পুলিশ প্রশাসন তাহলে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে। এভাবেই আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে পারব।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান পিপিএম (সেবা) বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য মাদক-সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তার বিরুদ্ধেও আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মাদকের কোনো স্থান আমার সময়ে এই জেলায় হতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘মাদক একটি পরিবার, একটি দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই আপনারা মাদকের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) গাজী রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান, ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব ও সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার।
সমাবেশের শুরুতে প্রধান অতিথি নিক্সন চৌধুরী এমপি উপস্থিত সবাইকে নিয়ে মাদকবিরোধী শপথ পরিচালনা করেন। এ সময় মাদক-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার ও সব ধরনের মাদকদ্রব্য ত্যাগ করে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করার অঙ্গীকার করেন।
তার আগে নিক্সন চৌধুরী ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সদরপুর ও ভাঙ্গা থানা পুলিশের জন্য দুটি গাড়ি উপহার দেন। প্রধান অতিথির হাত থেকে গাড়ির চাবি গ্রহণ করেন পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান।