মাথা কেটে হত্যার পর অমিত-দুলালের লাশও পোড়ানো হয়
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় মাথাবিহীন দগ্ধ ও খণ্ডিত জোড়া লাশ উদ্ধারের ১৫ দিন পর পরিচয় মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও বিচ্ছিন্ন মাথা দুটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাথা দুটি ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হবে। জোড়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে।’
লাশ দুটি আপন দুই ভাই দুলাল দাস ও অমিত দাসের। তাদের গ্রামের বাড়ি উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নে। তাদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে হতে পারে।
চরফ্যাশন থানা পুলিশ জানায়, গত ৮ এপ্রিল বিকেল ৫টায় উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফরাজিবাড়ির মহিবুল্লাহর বাথরুমের ট্যাংকি থেকে দগ্ধ লাশের বিচ্ছিন্ন মাথা দুটি উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দুটি ভোলায় দাফন করা হয়। এ ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করে।
এ ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের নাম সিরাজুল ইসলাম বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাকিদের নাম তদন্তের স্বার্থে জানায়নি পুলিশ। সিরাজুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাগানের পাশের ডোবা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও মাথা দুটি উদ্ধার করা হয়।
আটক সিরাজের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ধারণা করা হচ্ছে, জমি বিক্রির টাকার লেনদেন নিয়ে দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তিন বছর আগে দুলাল দাস ও অমিত দাস নিজেদের জমি ও বাড়ি বিক্রি করেন বিল্লাল ও সিরাজুল ইসলামের কাছে। এজন্য বায়না হিসেবে তাদের তিন লাখ টাকাও দেওয়া হয়। বাকি টাকা দলিল সম্পাদন করার সময়ে দেওয়া হবে এমনই কথা ছিল।
তবে হঠাৎ করেই দুলাল ও অমিত তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে রাতের আঁধারে ভারত চলে যায়। এরপর তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় দলিল সম্পাদন করে বাকি টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দুই ভাইকে আসতে বলে। বাকি টাকা নিতে গত বছর তাঁরা দুজন বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু সিরাজ ও বিল্লালের কাছ থেকে বাকি টাকা না পাওয়ায় তাঁরা জমি-বাড়ির দলিল করে দেননি।
পুলিশ আরও জানায়, টাকা নেওয়ার জন্য গত ৭ এপ্রিল আসলামপুর ইউনিয়নের সুন্দরি ব্রিজের অদূরে জামাল ভুঁইয়ার পরিত্যক্ত নির্জন বাগানবাড়িতে যায় দুলাল দাস ও অমিত দাস। পুলিশ ধারণা করছে, এই সময়ে তাদের খুন করে দুজনের মাথা কেটে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরদিন লাশ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ সন্দেহভাজন বিল্লালের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় বিল্লাল বাড়িতে ছিল না। পরে সিরাজুল ইসলামকে আটক করা হয়। এরপর একে একে আরও ছয়জনকে আটক করে পুলিশ।
আজ সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, দেহাবশেষের সঙ্গে থাকা সাইড ব্যাগে ব্যবহৃত মালামাল আংশিক পুড়ে যাওয়া মালামাল ও আটক সিরাজের বর্ণনানুযায়ী প্রাথমিকভাবে দুলাল দাস ও অমিতের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।