মাজেদের নাতিকে ছাত্রলীগের নেতা বানানোর দায় নিচ্ছে না কেউ
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি আবদুল মাজেদের নাতি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিব উল্যাহ পলাশ বিশ্বাসের পদ পাওয়ার দায় নিচ্ছে না জেলা ছাত্রলীগসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
জানা যায়, ২০১৭ সালে মাজেদের নাতি মুজিব উল্যাহ পলাশ বিশ্বাসকে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন সাইফুর রহমান সোহাগ, আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন এস এম জাকির হোসাইন। পলাশের পদ পাওয়ার পরই এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে জেলা কমিটি ওই কমিটি স্থগিত করে।
ওই সময়ে কমিটি স্থগিত হলেও পলাশকে বহিষ্কার করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কিংবা জেলা ছাত্রলীগ। ২০১৯ সালের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বে আসেন সভাপতি পদে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাকের দায়িত্বে আসেন লেখক ভট্টাচার্য্য। ২০২০ সালের শুরুতে ভোলা জেলা ছাত্রলীগের ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় উপজেলা কমিটি বহাল করা হয়।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই পুনরায় বহাল করা হয় বলে জানান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম চৌধুরী পাপন।
ইব্রাহিম চৌধুরী পাপন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সময়ই এই ছেলেকে নেতা বানানোর পক্ষে ছিলাম না। স্থানীয় চাপ ছিল বলেই বানাতে হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাধ্য হয়ে আবার তাকে পুনরায় বহাল করতে হয়েছে।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা ছিল কি না জানতে চাইলে পাপন চৌধুরী বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, তদন্ত করো, আর এখন কমিটি ছেড়ে দাও। তাই আমরা তাকে পুনরায় বহাল করেছি।’
এ বিষয়ে পাপন চৌধুরী নিজের অসহায়ত্বের কথাও প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই ছেলেকে নেতা বানাতে গিয়ে আমরা অসহায় ছিলাম, আমাদের হাতে কিছুই করার ছিল না।’
একই সুরে কথা বলেন ভোলা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদ। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই ছেলেকে নেতা বানানোতে আমাদের কোনো হাত নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে বানাতে হয়েছে। পুনরায় বহাল করার বিষয়েও আমাদের কিছু করার ছিল না।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে রিয়াজ বলেন, ‘জয় আর লেখক ভাইকে বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনা করার জন্য ফোন করেছিলাম। তাঁরা কলই ধরে না। বারবার ফোন করেও তাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না। এই রকম একটা অবস্থায় আমরা সিদ্ধান্ত কি নিব এর জন্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত জানতে বার বার জয়-লেখক ভাইকে ফোন দিচ্ছি, কিন্তু তাঁরা ফোন ধরছেন না।’
তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের নাতি মুজিব উল্যাহ পলাশ বিশ্বাসকে আবার পুনর্বহাল করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অজ্ঞতার বহিপ্রকাশ’
এত কিছুর পরেও কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই সহসভাপতি বলেন, ‘বহিষ্কার তো করবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, সেখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই করতে পারে। আমি মনে করি অতি দ্রুত তাকে বহিষ্কার করে কলঙ্ক মুক্ত করা।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যকে একাধিকবার ফোন দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।