মাকে খুন, গ্রেপ্তার ছেলের রোমহর্ষক বর্ণনা
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার মাকে হত্যা ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ছেলেকে (১৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে গোপালগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে মাকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেয় ছেলে।
নিহত হাসি রানী পাণ্ডে (৩৫) গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাবাড়ী গ্রামের মনোরঞ্জন পাণ্ডের স্ত্রী।
অভিযুক্ত ছেলে আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে বলে, ‘গত ২৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফিরে আমি ভাত খেতে চাই। এ সময় ছোট বোন ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। বাবা ভাঙ্গারহাট বাজারের নৈশপ্রহরীর ডিউটিতে ছিলেন। মা আমাকে ভাত দিতে গিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হঠাৎ প্লেট ছুড়ে মারেন। ভাতের পাতিল লাথি মেরে ফেলে দেন। একপর্যায়ে আমি চিৎকার ও উচ্চ স্বরে চেঁচামেচি করলে মা বঁটি দিয়ে আমাকে কোপাতে আসেন। আমি জ্বালানি কাঠ দিয়ে মায়ের মাথায় পেছনে আঘাত করি। এতে মায়ের মৃত্যু হয়। আমি ভয় পেয়ে যাই। এর আগে রাতে প্রবল বর্ষণের কারণে আশপাশে কোনো মানুষ ছিল না। লাশ কোলে করে নৌকায় তুলি। বাড়ি থেকে অর্ধকিলোমিটার দূরে নিয়ে একটি উঁচু জায়গায় লাশ নৌকা থেকে নামিয়ে রাখি। পরে পাশের বাড়ি থেকে লুকিয়ে পাটখড়ি ও জ্বালানি কাঠ এবং নিজেদের ঘর থেকে কেরোসিন নিয়ে গভীর রাতে মায়ের লাশ পুড়িয়ে দিই। পরে মাকে পোড়ানো কয়লা, ছাই, নৌকা পরিষ্কার ও গোসল করে বাড়ি ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়ি।’
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, নিহত হাসি রানী পাণ্ডের স্বামী মনোরঞ্জন পাণ্ডে (৩৭) ভাঙ্গারহাট বাজারে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন। ডিউটি শেষে ২৭ জুন সকালে মনোরঞ্জন বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে ঘরে দেখতে না পেয়ে ছেলেমেয়ের কাছে জানতে চান তাদের মা কোথায় গেছে। উত্তরে ছেলেমেয়ে তাদের মা মামার বাড়িতে গেছে বলে জানায়। মনোরঞ্জন তাঁর শ্বশুরবাড়িসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে স্ত্রীর সন্ধান পাননি।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এ ঘটনায় মনোরঞ্জন গত ১ জুলাই কোটালীপাড়া থানায় শ্বশুর-শাশুড়িসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পরে আবার একই ঘটনায় মনোরঞ্জন ৮ জুলাই কোটালীপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জিডির তদন্ত করে এ ঘটনার কোনো কিনারা করতে পারেনি। এদিকে অভিযোগ করায় শ্বশুর জুড়ান বাড়ৈ ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামাতা মনোরঞ্জন, তাঁর ভাই, ভাবি, বোন ও বোনের স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার গৃহবধূ হাসি রানী পাণ্ডের হত্যা রহস্য উদঘাটন করে। এ ঘটনার মূল হোতা হাসি রানী পাণ্ডের স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।