মহাদেবপুরে আদিবাসীদের কারাম উৎসব শেষ
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল ও বকাপুর গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ওঁরাও, মুণ্ডা ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন ‘ডালপূজাকে’ কেন্দ্র করে কারাম উৎসব উদযাপন করেছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই উৎসব পালিত হয়।
গতকাল বিকেলে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে নাটশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কারাম মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।
উদ্বোধন পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নওগাঁর মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর ও ধামইরহাট উপজেলা ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা থেকে আসা বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মেলায় অংশ নেয়। নাচে-গানে ও ঢোল-মাদলের আওয়াজে মাতোয়ারা হয় নাটশাল মাঠ।
এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিষয়ক গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহাদেবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব, বাসদ নওগাঁ জেলা কমিটির সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লী সহযোগী বিষয়ক সংস্থার (আরকো) নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় বক্তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান। এ ছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ওপর সব অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম বন্ধে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তাঁরা। আলোচনা শেষে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়।
আগের দিন সন্ধ্যায় নাটশাল ও বকাপুর গ্রামে কারাম পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতভর গ্রামের আখড়ায় পুঁতে রাখা কারাম (খিল কদম) ডালকে ঘিরে নাচ-গান অনুষ্ঠিত হয়। সকালে আখড়া থেকে কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শেষে গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দেয়।
প্রতিবছর ভাদ্র মাসে এর তিথি আসে। কারাম একটি গাছের নাম। আদিবাসীদের মতে, পবিত্র গাছটি তাঁদের মঙ্গলের প্রতীক। ওঁরাও, মুণ্ডাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এ উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে।