মসজিদের কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আবদুস শহিদ
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের ইসলামপাড়া এলাকায় মা-বাবার নামে আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহিদ। কাজ শুরু করেছিলেন পাকা মসজিদ নির্মাণের। কিন্তু সেই কাজ শেষ করে যেতে পারলেন না। তার আগেই আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি।
সাংবাদিক আবদুস শহিদের আত্মার মাগফিরাত চেয়ে আজ রোববার বাদ জোহর তোরাবগঞ্জ গ্রামের ইসলামপাড়া এলাকায় বাড়িসংলগ্ন টিনশেড মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়। এতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন মসজিদের খতিব এবং আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং মসজিদের জন্য প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুস শহিদ তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে ৪৫ শতাংশ জমি দান করেছেন। তাঁর আর্থিক সহায়তায় ও সার্বিক প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে এই মসজিদ এবং মাদ্রাসার কাজ শুরু হয়। আল্লাহ উনাকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেছেন। হয়তো আমাদের জন্য এটি ঈমানি পরীক্ষা। উনি অভিভাবক হিসেবে উনার প্রতিষ্ঠানের কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি মাদ্রাসা ও মসজিদের কাজ শেষে করে যেতে চাইতেন। আজ আমাদের মনটা বড্ড ব্যাকুল।’
শিক্ষক নুরুল ইসলাম সাংবাদিক আবদুস শহিদের নিঃস্বার্থ দানের কথা উল্লেখ বলেন, ‘আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এ ছাড়া এতিমখানায় ১০০ জন শিক্ষার্থী রাতে খানা খেয়ে থাকে। আমরা বিশাল এক অভিভাবককে আজ হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহ যেন তাঁর কুদরতি রহমতে এই প্রতিষ্ঠানকে দ্বীনের জন্য কবুল করেন। প্রতিষ্ঠানের যে অসম্পূর্ণ কাজগুলো রয়েছে, আমি আশা করছি- সেগুলো সবার প্রচেষ্টায় শেষ হবে।’
এক প্রতিক্রিয়ায় আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি আবদুল আলীম বলেন, ‘আবদুস শহিদ সাহেব মসজিদ এবং মাদ্রাসার জন্য জায়গা দান করে গেছেন। আল্লাহ যেন উনার দানকৃত জমি কবুল করেন।’
সাংবাদিক আবদুস শহিদের ছোট বোনের স্বামী মো. কুদ্দুস উল্ল্যা বলেন, ‘আবদুস শহিদ ভাই আমার ভাইসাব, তিনি ভালো লোক ছিলেন। তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন- এটা আমরা মানতে পারছি না। তিনি মাদ্রাসা-মসজিদে অনেক দান করেছেন। জমিও দিয়েছেন।’
আবদুস শহিদের ভাগ্নে মো. শাহজাহান বলেন, “আমার মামা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। উনি এ এলাকার কোনো মানুষের মনে কোনো কষ্ট দেননি। সব সময় মানুষের উপকার করতে চেয়েছেন। এই মসজিদ-মাদ্রাসা যখন দেন তখন শুধু বলতেন, ‘ভাগিনা এটা আমি দেখে যেতে পারব তো?’ আমি বলেছি, ‘মামা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখেন।’ তিনি যখন অসুস্থ হয়েছিলেন, আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। শুধু ফোনে কথা হয়েছে, দেখা করতে পারিনি। মামার সঙ্গে আর দেখা হলো না।”
এদিকে, সাংবাদিক আবদুস শহিদের মৃত্যুতে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী ও রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আবদুস শহিদ স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
আবদুস শহিদের মৃত্যুতে এনটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি আবদুস শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি ইসলামপাড়া এলাকায় নিজের ২০ শতাংশ জমিতে মৃত মা-বাবার নামে ‘আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা’ প্রতিষ্ঠা করেন। একই স্থানে ২৫ শতাংশ জমিতে নিজের নামে মসজিদ স্থাপন করেন। বর্তমানে মাদ্রাসায় ২৫০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। আবদুস শহিদের প্রচেষ্টায় ও বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায় মসজিদটি পাঁচতলা ও মাদ্রাসাটি তিনতলা ভবনে উন্নীত করার কাজ চলছে।