ভোটের সময় শব্দদূষণের জন্য দুঃখিত আতিকুল, পোস্টারেরও বিকল্প চান
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দুই সিটি নির্বাচনের সময় পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য প্রার্থী মাইক ও শক্তিশালী সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নিজেদের প্রচারের সময় বিকট শব্দদূষণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করায় নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম।
নৌকা মার্কা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী এই মেয়র বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সাধারণ জনগণ অনেক কষ্ট করেছেন। রাস্তা বন্ধ ছিল, শব্দদূষণ হয়েছে। এ জন্য আমি দুঃখিত।’
বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী আতিকুল আজ সোমবার সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি নির্বাচনে প্রচারের বিষয়াদি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষের স্বাভাবিক শব্দ গ্রহণের ক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবল। কিন্তু ঢাকা শহরের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে এর মাত্রা ক্ষেত্রবিশেষে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি থাকে। এই মাত্রায় শব্দদূষণ যেকোনো মানুষের বধির হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আর ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের প্রচারের সময় এই শব্দদূষণ নিয়ে মানুষের বিরক্তি ছিল চরম পর্যায়ে, যার বহিঃপ্রকাশ নাগরিকরা করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়েছে। নাগরিকরা প্রার্থীদের প্লাস্টিক লেমিনেটিং করা পোস্টার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ফলে একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা তাঁদের প্রচারের সময় পরিবেশদূষণ, শব্দদূষণ হয় না এমন প্রচার ব্যবস্থার কথাও বলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ঢাকা দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তাঁর দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছেন এক-দুদিনের মধ্যে তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে পরিবেশ বিধ্বংসী সব ধরনের পোস্টার ও ব্যানার সরিয়ে নেওয়ার জন্য।
এর মধ্যে আজ উত্তরের মেয়র আতিকুলও ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রচারের সময় পোস্টার (বিশেষত প্ল্যাস্টিক লেমিনেটিং করা) ও মাইকিংয়ের বিকল্প কিছু বের করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘আগামী নির্বাচনে যেন সিটিতে কোনো ধরনের পোস্টার লাগানো, রাস্তা ব্লক হওয়া এবং কোনো ধরনের মাইকিং করে যেন শব্দদূষণ করা না হয় সেজন্য ইসির প্রতি আহ্বান জানাব,’ যোগ করেন ডিএনসিসি মেয়র।
আতিকুল ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করায় ঢাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, এখন তা বাস্তবায়ন করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। আর এ জন্য গণমাধ্যমসহ নগরবাসীর সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
গত শনিবার দিনভর ঢাকার দুই সিটির ভোট গ্রহণ হয়। এই প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এই নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম; গড়ে প্রায় ২৭ শতাংশের মতো।
নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন চার লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষে পেয়েছেন দুই লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট। আতিকুল এক লাখ ৮৩ হাজার ৫০ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ভেঙে দুটি সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের আনিসুল হক। দায়িত্ব পালনের সময়ই মারা যান আনিসুল। পরে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আতিকুল মেয়র হিসেবে নয় মাস দায়িত্ব পালন করেন।