ভৈরবে অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায়
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রোডপারমিটের নাম করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে মাসিক ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে চাঁদাবাজচক্র। ‘মালিক ভরসা সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমজীবী সংগঠন’ নামের একটি অবৈধ ভূঁইফোড় সংগঠনের নামে এই চাঁদা আদায় করছে স্বপন মাহমুদ, মিজান মিয়া ও শহিদুল্লাহ নামের তিন ব্যক্তি।
তাদের দাবি পূরণ না করলে জোরপূর্বক অটোরিকশাসহ চালক-মালিকদের আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের কালিকাপ্রসাদ পুরাতন হাইওয়ে থানার পাশে সরকারি জমিতে অবৈধ কার্যালয় তৈরি করে অবাধে এই চাঁদাবাজি করছে বলে জানায় তারা।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এই জুলুম-অত্যাচার থেকে তাদের রক্ষায় প্রতিকার চেয়ে গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানার কাছে একটি আবেদনপত্র দেন তারা। যার অনুলিপি দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও প্রেসক্লাব বরাবর।
দাখিল করা আবেদনপত্রসহ চালক-মালিকদের পক্ষে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কসহ সড়ক হয়ে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে প্রতিদিন চার শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। মহাসড়কে যেহেতু এইসব অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ, এই সুযোগে প্রশাসনকে তারা ম্যানেজ করে অটোরিকশা চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার কথা বলে এই চাঁদা আদায় করে আসছে। চলাচলকারী ওইসব অটোরিকশার মালিক ও চালকদের প্রত্যেককে প্রতিমাসে রোডপারমিটের নামে তাই দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা করে।
চালক ও মালিকরা জানান, বর্তমান মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এখানে প্রায় তিন মাস যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। বর্তমানে সীমিত পরিসরে অটোরিকশা চলাচল করলেও, যাত্রী কম থাকায় তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। এর ওপর চাঁদাবাজদের অত্যাচারে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
কালিকাপ্রসাদ গ্রামের অটোরিকশা চালক কাশেম খান, কালাম মিয়া ও কাশেম মিয়া অভিযোগ করে জানান, চাঁদা আদায়কারীদের কথামতো চাঁদা দিতে না পারায় তাদেরকে সমিতির কার্যালয়ে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায় স্বপন মাহমুদ, মিজান ও শহীদুল্লাহর লোকজন। হুমকি দেয় চাঁদা পরিশোধ না করলে হাইওয়ে পুলিশ দিয়ে অটো আটক করে মামলা দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা অভিযোগপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রটি মার্ক করে দিয়েছেন তিনি।
ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন রহমানের কাছে এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং বন্ধ। যদি কেউ চাঁদা আদায় করে, তবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদাবাজরা রোডপারমিট দেওয়ার কে? এই প্রশ্ন রেখে ওসি বলেন, ‘ভৈরবের ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দাভাব কাটাতে স্থানীয় নেতাদের দাবির মুখে এই রোডে ধীরগতির যানবাহন চলায় বাধা দিচ্ছে না হাইওয়ে পুলিশ। এই সুযোগে কোনো গোষ্ঠী চাঁদাবাজী করলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এই হুঁশিয়ারি আমরা সব শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের ডেকে এনে জানিয়ে দিয়েছি বহু আগেই।’
অটোচালকদের আবেদনপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে ভৈরব থানার ওসি মো. শাহিন জানান, ভৈরবের পরিবহন সেক্টরের যেকোনো ধরনের চাঁদা আদায় কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। তারপরও কেউ যদি গোপনে এমনটি করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অটোরিকশা চালক-মালিকদের অভিযোগের অনুলিপির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু বলেন, ‘এই করোনাকালে অটোরিকশা চালক-মালিকসহ সব ধরনের শ্রমজীবী মানুষেরই দুর্ভোগ চলছে। আমরা দলীয়ভাবে সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতাও করে যাচ্ছি।’
এই অবস্থায় এমন চাঁদাবাজী কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রশাসন দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে তারা দলীয়ভাবে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে বাধ্য হবেন। তখন যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে বলেও তিনি জানান।
চাঁদা আদায় নিয়ে বক্তব্য জানতে স্বপন মাহমুদ, মিজান মিয়া ও শহিদুল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।