ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বরিশাল থেকে গণসংগ্রামের ডাক বিএনপির
জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আরেকটি গণসংগ্রামে দেশবাসীকে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে দেশের রিজার্ভ, জনগণের ভোট ও সম্পদ কোনোটাই নিরাপদ নেই। রাজপথের গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাদের প্রতিটি কাজের পাই পাই করে হিসেব নেওয়া হবে।
আজ শনিবার বরিশাল শহরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেছেন। বিএনপির এ গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বরিশাল শহরকে গোটা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। সব ধরনের বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে আজ লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটে ঐতিহাসিক এ উদ্যানে। সমাবেশস্থলের বাইরে শহরের প্রধান সড়কের তিন কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
রাজপথে ফয়সালা করে দেশকে রক্ষা করা হবে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন নতুন বুদ্ধি করে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ। সেটি আর হতে দেওয়া হবে না। রাজপথে ফয়সালা করে দেশকে রক্ষা করা হবে।
জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো কিছুই আজকে আপনাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। টানটা কোথায়? আমার কলিজার টান। সেই টানটা তৈরি করে দিয়েছেন ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
এসময় দলের নিহত এক নেতার ছোট শিশুকে দেখিয়ে তিনি বলেন, আজকে আমরা যে আন্দোলন করছি, এর বলি হচ্ছেন তারা (চলমান আন্দোলনে নিহত ৫ নেতা)। আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল, ক্ষমতায় এসে কি করছে? ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছে, আওয়ামী লীগের ছেলেদের চাকরি দিয়েছে। ২০ লাখ করে টাকা নিয়েছে।
পালাবার পথ পাবেন না, জেলে আপনি যাবেন নিশ্চিত : মির্জা আব্বাস
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলেছেন, ‘বরিশালে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিএনপির সমাবেশকে খাটো করার চেষ্টা করেছে। পালাবার পথ পাবেন না। জেলে আপনি যাবেন নিশ্চিত…।’
মির্জা আব্বাস বলেন, পুলিশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার জীবনে দেখিনি বিরোধীদলের মিটিংয়ে পুলিশ তাঁবু করে দেয়। তারা আমাদের পুরো মাঠ ব্যবহার করতে দেবে না। কেন দেবে না? তারা মনে করেছিল দেশনেত্রী এখানে সমাবেশে করেছিল, নেতাকর্মীরা আরও বেশি জেগে উঠবে। তাই তারা ওখানে প্যান্ডেল করতে দেয়নি। কি লাভ হলো? আমাদের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নিয়েছে রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
আজ পুরো বরিশাল মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, এই মুহূর্তে যাতে লাইভ টেলিকাস্ট না হতে পারে, সেজন্যে সকল প্রকার নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি নেই। রাজপথ বন্ধ, জলপথ বন্ধ, আকাশপথও বন্ধ। কি লাভ হলো? সারা দেশের মানুষ জেনে গেছে।
তিনি আরও বলেন, শুনলাম নির্দেশনা আছে, বিএনপির সমাবেশ যাতে পুরোটা দেখানো না হয়। কুমিল্লায় কাদের সাহেবের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) জনসভায় যতটুকু দেখানো হবে, বিএনপিরও যেন ততটুকু দেখানো হয়।
দেশের মানুষ আ.লীগকে লালকার্ড দেখিয়েছে : হাফিজ উদ্দিন আহমেদ
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর অতীষ্ট হয়ে তাদের লালকার্ড দেখিয়েছে। সমাবেশে আসার জন্য আওলাদ নামে একটি লঞ্চ ভোলাঘাটে অবস্থান করেছিল। বর্তমান লুটেরারা লঞ্চের চেয়ার টেবিল খাওয়ারসহ সকল কিছুই লুট করে নিয়ে গেছে। এ হলো আওয়ামী লীগ সরকারের চরিত্র।
মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই। সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নেই। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে নিয়ে গেছে। সমাজ জীবনের সকল স্তরকে তাঁরা বিষাক্ত করে তুলেছে। দেশের স্বাধীনতা এখন আদুভাই। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ওপর অতীষ্ট হয়ে লালকার্ড দেখিয়েছে।
পরিবহণ ছাড়াও আন্দোলন হতে পারে, জনগণ তা দেখিয়ে দিয়েছে : আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে পরিবহণের প্রয়োজন হবে না। পরিবহণ ছাড়া যে আন্দোলন হতে পারে, এটা বরিশালের জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে। মানুষ গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছে না। আমি আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের জবাব দিতে চাই না। কারণ আমাদের মূল দাবি থেকে সরে যেতে পারে।
খসরু বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দেশের মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে নেমে এসেছিলেন। তিনি চাইলে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার টাকা পায় না সরকার, তাদের ভোট চুরির মেশিন কেনার পয়সা আছে।
ভোটাধিকারের জন্য আরেকটি সংগ্রাম করতে হবে : মজিবর রহমান সরওয়ার
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরওয়ার বলেছেন, আজ ভোটাধিকারের দাবি উঠেছে। ১৯৭০ সালে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কারণে দেশে মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র সংগ্রাম হয়েছে। একই কায়দায় শেখ হাসিনা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই দেশে নতুন করে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করতে হবে।
মজিবর রহমান সরওয়ার আরও বলেন, সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। কিন্তু জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, শুধু তাদের বেতন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশের মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। দেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে।
সরকার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোট হবে না : জয়নাল আবেদীন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেছেন, আপনারা যেভাবে উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটবে। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, এটা হচ্ছে নিশিরাতের সরকার। এই সরকার যতক্ষণ না বিদায় হবে, ততদিন সুষ্ঠু ভোট হবে না। তাই সবার দায়িত্ব হচ্ছে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া
জয়নাল আবেদীন বলেন, অনেকেই বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নাকি আবার সরকার জেলে নেবেন। তাকে কি কোনো আইনগত বৈধ জাজমেন্টে নিয়ে ছিলেন? একটা অবৈধ ফরমায়েসি জাজমেন্ট দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছেন।
খালেদা জিয়ার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা, সরকার বাহাদুররা শুনে রাখেন, এরশাদের যখন পতন হয়েছে তার পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়েছিল…।’
প্রতিটি জিনিসের পাই পাই করে হিসাব নেওয়া হবে : আলাল
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, প্রতিটি জিনিসের পাই পাই করে হিসাব নেওয়া হবে। জঙ্গি দমনের কথা বলছেন, বড় জঙ্গি তো তারা, যারা দিনের ভোট রাতে করে। সুতরাং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জঙ্গিকে বিতাড়িত করতে হবে
আপনার জেলে যাওয়ার সময় হয়েছে, প্রস্তুতি নিন : সোহেল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া নয়, আপনি আমার ভাইদের হত্যা করেছেন, আপনার জেলে যাওয়ার সময় হয়েছে, প্রস্তুতি নিন। আপনার চাচাতো মামাতো ভাই এদের কোনো খাওয়া বরিশালে নাই। বরিশালের মাটি খালেদা জিয়ার ঘাঁটি, বরিশালের মাটি তারেক রহমানের ঘাঁটি।