বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের ১১ সদস্য বিশিষ্ট দলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সৌদি আরবের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাছির আব্দুল আজিজ আব্দুল্লাহ আল দাউদ।

বৈঠকে উভয় মন্ত্রী নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়, ভিসা সহজীকরণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, মানবপাচার ও মাদক নিয়ন্ত্রণে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং হজ ও ওমরা পদ্ধতি সহজীকরণ সম্পর্কে আলোচনা করেন।

শুরুতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ গভীর সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্যতার কথা উল্লেখ করে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উভয় দেশের সহযোগিতার ওপরে গুরুত্বারোপ করে দুই দেশের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জবাবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক একটি চুক্তি করার কথা বলেন। দুই দেশ এতে সম্মত হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী দুই দেশের পক্ষে Security Cooperation Agreement এবং Road to Makkah Service Agreement নামে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

Road to Makkah Service Agreement স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের হজযাত্রা সহজ হবে। ফলে হজযাত্রীরা বাংলাদেশেই তাদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে সরাসরি সৌদি আরবে তাদের নিজ নিজ অবস্থানে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে সৌদি বিমানবন্দরে দ্বিতীয় দফায় কোনো ইমিগ্রেশন কার্যক্রম করতে হবে না। ফলে হজযাত্রীদের ওমরা ও হজব্রত পালন করা অনেক সহজ হবে। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি সরকার ও জনগণের প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌছে দেন। তিনি উভয় দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে সন্ত্রাস দমন, মাদক নির্মূল এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট হালনাগাদ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ হতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সৌদি সরকার ও ওআইসির সহযোগিতা কামনা করেন। সৌদি প্রতিনিধি দলের পক্ষ হতে এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবেন বলেন জানান।

বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নুরুল আনোয়ারসহ স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।