‘ভাঙো বাবা সব ভাঙো, সব পুইড়া যাবে’
চোখের সামনেই দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। পাশের টিনের ঘরে আগুন ধরেছে। আক্তারুজ্জামান শেষ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছেন তাঁর কষ্টে গড়া ঘরকে বাঁচাতে। চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি নিজের হাতে গড়া তাঁর ঘরটি ভাঙছেন। ভেঙে বের করার চেষ্টা করছেন ঘরের টিন ও বাঁশসহ আসবাবপত্র।
আজ বুধবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর রোডের শিয়ালবাড়ী মোড়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।
শুধু আক্তারুজ্জামান নন, একই স্থানে অনেককে দেখা যায় ঘর ভেঙে সবকিছু বের করার চেষ্টা করছেন। সবকিছু বের করার জন্য বস্তির ব্যারিকেড দেওয়া দেয়ালও ভেঙে ফেলেছেন কয়েকজনে মিলে। দেয়াল ভাঙার পর অন্তত ১৫ জন মিলে একে অপরের ঘর ভেঙে জিনিসপত্র বের করার চেষ্টা করছিলেন।
আক্তারুজ্জামানকে লক্ষ করে তাঁর ছোট ছেলে তামিম হোসেন বলে ওঠে, ‘ভাঙো বাবা সব ভাঙো, সব পুইড়া যাবে।’
তখন আগুনের তাপে সেখানে থাকা যাচ্ছিল না। চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের শরীর ঘামা শুরু হয়েছে গরমে। সে সময় ছেলের এই কথা শুনে আক্তারুজ্জামান কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে বললেন, ‘বাবা তুমি যাও। আমরা দেখছি।’ এরপর আবারও ঘর ভাঙা শুরু করেন আক্তারুজ্জামান।
জিনিসপত্র বের করার সময় আবুল হোসেন দেয়াল ভাঙতে ভাঙতে বলেন, ‘কিচ্ছু রাখিস না। কিচ্ছু থাকবে না। সব পুড়ে যাবে। আল্লাহ, এমন আগুন জীবনেও দেখিনি।’
আক্তারুজ্জামানসহ কয়েকজনের ভেঙে দেওয়া আসবাবপত্র টেনে টেনে বের করছিলেন আরো কয়েকজন। সে সময় বাবুল হোসেন বলে ওঠেন, ‘দ্রুত টান। আরো সব বের করতে হবে। দুই মিনিটও সময় পাবি না আর।’
এর আগে আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে রূপনগর আবাসিক এলাকার পেছনের খালপাড়ের বস্তিতে আগুন লাগে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন। দুপুর ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে আগুনে বস্তির কয়েকশ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী আহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আগুনের ঘটনা শোনার পরপরই সেখানে ফায়ার সার্ভিস চলে যায়। একে একে ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী আহত হয়েছেন।’