ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মধু স্যারের ‘মধুর স্নেহ’
এক হাতে মার্কার। তা দিয়ে ক্লাসের হোয়াইট বোর্ডে লিখছেন শিক্ষক। আরেক হাতে একটি শিশু। সেই শিশু নিয়ে পুরো ক্লাস নিয়েছেন তিনি। এমন দুটি ছবি আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছবিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক পঙ্কজ মধুর। তবে কোলের শিশুটি তাঁর এক কিশোরী ছাত্রীর। কোলের শিশু নিয়ে ওই ছাত্রীর পাঠদানে সমস্যা হচ্ছিল দেখে শিক্ষক পরম স্নেহে শিশুটিকে কোলে নিয়ে ক্লাস নেন।
অনেকে বিষয়টিকে মানবিকভাবে দেখে শিক্ষকের প্রশংসা করেছেন। অনেকে আবার বিষয়টিকে সাজানো নাটক বলে মনে করছেন। সচেতন মহল মনে করে, বিষয়টি ঠিক হয়নি। এতে শিশুটির স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক পঙ্কজ মধুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির প্রথম দিকে গোপনে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বিষয়টি স্কুলের কেউ জানত না। সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে এক ছাত্রীর অনুপস্থিতি দেখতে পাই। বিদ্যালয় থেকে ছিটকে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার বিয়ে ও সন্তানের খবর পাই। তারপরও ছাত্রীর পরিবারকে অনুরোধ করি তাকে স্কুলে পাঠানোর। আজ রোববার সকালে ওই ছাত্রী শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে স্কুলে আসে। সন্তান নিয়ে ওই ছাত্রীর ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে দেখে শিশুটিকে আমি কোলে নিই।’
পঙ্কজ মধু বলেন, ‘এ নিয়ে ভাইরাল হব—এমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। স্নেহ-মমতা থেকে শিশুটিকে কোলে নিয়ে ক্লাস করিয়েছি।’
সাবেকুন নাহার সাকিনা নামের ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, ‘স্যার (পঙ্কজ মধু) আমাদের আদর-স্নেহ করেন।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, বিষয়টি নাটক ছাড়া আর কিছুই না। কেন সেই ছাত্রী তার কোলের শিশুকে বাড়িতে না রেখে স্কুলে নিয়ে এলো? এতে মায়ের পাশাপাশি শিশুটিরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন ভট্টাচার্য বলেন, ‘শিশুকে নিয়ে এভাবে স্কুলে যাওয়া সঠিক হয়নি। এতে শিশুসহ মায়ের ঝুঁকি রয়েছে। সরকার যেহেতু স্কুলের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেননি। সেক্ষেত্রে এভাবে স্কুলে নেওয়া ঠিক নয়। দুই ঘণ্টা একজন শিক্ষক কিভাবে শিশু নিয়ে ক্লাস করবেন? এ বিষয়ে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।’
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে জানান, করোনার সময়ে শিশুকে নিয়ে এভাবে স্কুলে যাওয়ায় শিশুটির সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শুধু করোনা নয়, অন্যান্য রোগেরও ঝুঁকি থাকে।