বেনাপোল কাস্টমসে ১৩ পদে আবেদন ৬৪ হাজার
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তিন বছর পর নিয়োগ সম্পন্ন করতে চলেছে বেনাপোল কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ। ১৩টি শূন্য পদের জন্য লোক নেওয়া হবে ৯৪ জন। এর বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৬৪ হাজার চাকরিপ্রার্থীর।
প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে আছেন প্রায় ৫২ হাজার প্রার্থী। এসব প্রার্থী হতাশায় দিন পার করেছেন। অনেকের আবার চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। অবশেষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার কার্ড ছাড়া শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে খুশি চাকরিপ্রার্থীরা।
যশোরের বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলে আগামী ২৯ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর ৬ ডিসেম্বর বেনাপোল কাস্টম হাউসে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তারপর চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হবে।
কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল কাস্টম হাউসে জনবল সংকট নিরসনে ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ১৩ বিভাগে ৯৪ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ওই বছরের ১৫ নভেম্বর। পদের মধ্যে ছিল কম্পিউটার অপারেটর চারজন, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর দুজন, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর দুজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পাঁচজন, টেলিফোন অপারেটর একজন, ফটোকপি অপারেটর দুজন, ইলেকট্রিশিয়ান একজন, গাড়িচালক ১০ জন, সিপাহি ৫৬ জন, উচ্চমান সহকারী ছয়জন, ক্যাশিয়ার একজন, অফিস সহায়ক তিনজন ও নিরাপত্তা প্রহরী একজন নিয়োগের কথা বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৩টি বিভাগে কম্পিউটার অপারেটর পদে এক হাজার ৩৭৮টি, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ১৯১, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর ৮০৭, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পাঁচ হাজার ৩৩২, টেলিফোন অপারেটর ৪৮, ফটোকপি অপারেটর ২১০, ইলেকট্রিশিয়ান ৭৬, গাড়িচালক ৯০৭, সিপাহি ৩১ হাজার, উচ্চমান সহকারী ১৮ হাজার ৬১০, ক্যাশিয়ার ৪১৯, অফিস সহায়ক দুই হাজার ৩৯ এবং নিরাপত্তা প্রহরী পদে ১৪১টি আবেদন জমা পড়ে।
এ ছাড়া পদের নাম নেই এমন আবেদনের সংখ্যা দুই হাজার ১৯৮টি। জনবলের অভাবে আবেদন যাচাই-বাছাই করতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। পরে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন জানালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব চলতি বছরের ১৮ জুলাই এক চিঠিতে সরাসরি নিয়োগযোগ্য শূন্য পদে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্রের মেয়াদ ২১ অক্টোবর-২০১৯ থেকে ২০ অক্টোবর-২০২০ এক বছর বৃদ্ধি করেন।
ওই সূত্রটি আরো জানিয়েছে, আবেদনকারীদের পরীক্ষার প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় সাবেক কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন নিয়োগ কমিটিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছিলেন। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন, ডেপুটি কমিশনার শাকিলা পারভীন, ডেপুটি কমিশনার রাফিয়া সুলতানা, ডেপুটি কমিশনার সাঈদ আহম্মেদ রুবেল, সহকারী কমিশনার নূরুল বাছিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় বলে তথ্য মিলেছে।
এরপর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কমিটি একটু নড়েচড়ে বসলেও শওকাত হোসেন বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে কার্যক্রম কিছুটা থমকে যায়। বর্তমান কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী যোগদান করার পর শুরু হয় আবেদন যাচাই-বাছাই। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাছাই কাজ শেষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার কার্ড ইস্যু করে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ছাড়া হয়।
এত পরীক্ষার্থীর বেনাপোলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় যোগাযোগ করা হয় যশোরের বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ে। পরে আসন সংখ্যা নিশ্চিত হয়েই আগামী ২৯ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কয়েকজন আবেদনকারী জানান, আবেদন করে বসে থাকা কয়েকজনের চাকরির বয়স এরই মধ্যে চলে গেছে। কার্ড পাওয়ার খবরে তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছে পরীক্ষার বিষয়ে। তিন বছর পর হাতে অ্যাডমিট কার্ড পেয়ে অনেকটা খুশি তাঁরা। এখন সময় গুনছেন পরীক্ষার দিনটির।
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব এস এম শামীমুর রহমান বলেন, ‘নানা জটিলতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে ছিল সত্য। মন্ত্রণালয়ে বারবার অনুমোদনের জন্য যোগাযোগ করতে হয়েছে। এখন সব সমস্যা, সব জটিলতা কেটে গেছে। আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার টার্গেট কাস্টমসের।’