বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা, আখেরি মোনাজাতে লাখো মানুষ
‘আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন। আমাদের দোয়া কবুল করে নিন। আমাদের গুনাহ মাফ করে দিন।’ টঙ্গীর তুরাগতীরে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি দুই হাত তুলে অংশ নিয়েছেন মোনাজাতে। একই সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকার লাখো মুসল্লি অংশ নেন ওই মোনাজাতে। সারা বিশ্বে শান্তি ও মানুষের মঙ্গল কামনায় লাখো মুসল্লি অংশ নেন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে।
হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা জামশেদ। ইসলামের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় এবং বিশ্ব শান্তি, সংহতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা। দুপুর পৌনে ১২টায় শুরু হয় মোনাজাত। ঠিক দুপুর ১২টা সাত মিনিট পর্যন্ত মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া করা হয়। সবার ব্যক্তিজীবনের শান্তি ও মঙ্গলের জন্যও দোয়া করা হয়। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন মুসল্লিরা।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আজ ভোর থেকেই লাখো মুসল্লি হেঁটে, বিভিন্ন যানবাহন ও ট্রেনে করে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আজ ভোর থেকে মোনাজাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানের পাশের সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ও যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। প্রায় সাড়ে আট হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছেন। গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয়। ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ময়দানের চারপাশে থেকে। একই সঙ্গে ময়দানের ভেতরে খিত্তায় খিত্তায় অবস্থান নিয়ে গোয়েন্দা কর্মীরা নজরদারি করছেন।
এদিকে গতকাল শনিবার ছিল বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন। দ্বিতীয় দিনে বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ মুরসালীন। আর এর বাংলা তরজমা করেন মুফতি আজিমউদ্দিন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৩১ দেশের এক হাজার ৪৪১ জন বিদেশি মেহমান এ পর্বে অংশ নেন।
ইবাদত-বন্দেগি, খিত্তাভিত্তিক তাশকিলে তালিম, ইস্তেকবাল জামাত, নূরেওয়ালি জামাত গঠন এবং চিল্লাবন্দি হয়ে দেশ-বিদেশে দ্বীনের দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়াসহ তাবলিগের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বয়ান শোনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব চলছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে শুধু তাবলিগ কর্মকাণ্ডের ওপর আলোচনা ও জোটবন্দি হয়ে তাবলিগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইজতেমা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বীনের কাজে লাগাবেন বলে জানিয়েছেন মুসল্লিরা।
মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেন টঙ্গী জংশনে যাত্রাবিরতি করবে।
এর আগে গত শুক্রবার ভোরে টঙ্গীর তুরাগতীরে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ ওসমানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে ৫৫তম ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়া তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী তাবলিগের সদস্যরা এ পর্বে অংশ নেন।
বিশ্ব ইজতেমার এবারের পর্বে ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভি যোগদান না করলেও তাঁর পক্ষে তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি ও আলেমসহ ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে।