বিশ্বমানের ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার ইশরাকের
আধুনিক ও যুগোপযোগী বিশ্বমানের ঢাকা গড়তে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নগরবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন।
১৬টি দফায় ১৫৭টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ইশরাক হোসেন জানান, নাগরিক সেবা, নাগরিক বিনোদন, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবেশ উন্নয়ন বনায়ন ও বর্জ ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমাজসেবা কার্যক্রম, জননিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, গ্রন্থাগার ও জাদুঘর, নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন ব্যবস্থা তুলে ধরেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে নির্বাচনী ইশতেহার পড়ে শোনান ইশরাক হোসেন।
প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি
ইশতেহারে ইশরাক হোসেন বলেন, নির্বাচিত হলে স্বল্প মেয়াদে প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্বরিৎ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
ইশরাক বলেন, ওয়ার্ডভিত্তিক ব্যায়ামাগার আধুনিক করা হবে। বিশেষ স্থানে কৃষক মার্কেট ও নাইট মার্কেট চালু করা হবে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। নদী দূষণ রোধ করে নদী পর্যটন চালু করা হবে।
দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
ইশতেহারে ইশরাক হোসেন বলেন, দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনাদের সবার আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করব ইনশা আল্লাহ।
হটলাইন চালু
যাবতীয় সেবাপ্রাপ্তির জন্য এবং সব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগরী ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হটলাইন চালু করা হবে। সেবাপ্রাপ্তির চাহিদা অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া যেকোনো নাগরিকের জন্য আমার দুয়ার এবং ব্যক্তিগত ফোন সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে।
মিথ্যা মামলা আমাদের মা খালেদা জিয়া কারাগারে
ইশতেহারে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমি আজ এমন এক সময় আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি যখন বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিনা অপরাধে কেবল অসৎ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন ষড়যন্ত্র করে আমাদের মা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে প্রায় দুই বছর ধরে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় নির্জন কারাগারে আটকে রেখেছে। জামিন তাঁর হক।
অথচ নিষ্ঠুর এই জালেম সরকার দারুণভাবে অসুস্থ বয়োজ্যেষ্ঠ খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এক দশকের অধিককাল দেশে ফিরতে দিচ্ছে না। হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় জেলে আটকে রাখা হয়েছে। লঅখ লাখ বিএনপির নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। কিন্তু জনগণের দল হিসেবে বিএনপি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। নির্বাচনই যেহেতু ক্ষমতা বদলের একমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থা, তাই আমাদের দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, বেগম জিয়ার মুক্তি এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার স্বার্থে আপনারা ধানের শীষ তথা বেগম জিয়ার পক্ষে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন।’
নৈতিকতার শক্তি পুনরূদ্ধার
ইশরাক হোসেন বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। তা ছাড়া রয়েছে যৌতুক সমস্যা, ইভ টিজিং, এসিড নিক্ষেপসহ নানা ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের দৌরাত্ম্য। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের ভয়াবহ ধ্বংস নামার কারণেই সমাজে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গণমাধ্যম, একাডেমিক কারিক্যুলাম, সার্বিক ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা এবং ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পুনরুদ্ধার করা হবে।
বিএনপির এই মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, রাজধানীর উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ সার্ভিস চালু করা হবে। গ্রন্থাগার ও জাদুঘর নির্মাণ করা হবে।
বছরে দুইবার নগরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নাগরিকদের উদ্দেশে প্রকাশ করার কথাও ঘোষণা করেন ইশরাক হোসেন। এ ছাড়া মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকাবাসী যেকোনো সময় মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে বলে জানান অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক।
ইশরাক আরো বলেন, ‘প্রিয় নগরবাসী, আমি ঢাকার সন্তান, আপনাদেরই সন্তান, আপনাদের আপনজন। আপনাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গে আমার জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ঢাকা আমাদের আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার মমতা মাখা মহানগরী। এই ঐতিহাসিক নগরীর সন্তান হিসেবে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে আধুনিক বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে আমার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা,স্বপ্ন ভাবনা ও প্রত্যাশার কাঠামো আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তা আরো বাস্তব,প্রায়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে ইনশা আল্লাহ।’
ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,মির্জা আব্বাস,গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু,মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি নেতা রুহুল আলম চৌধুরী, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, এ বি এম মোশারফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, শিরিন সুলতানা, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সরোয়ারসহ অন্য নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিকল্পধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফর উল্ল্যাহ চৌধুরী প্রমুখ।