বিনামূল্যে বিলিয়ে দিতেই সবজির চাষ করেন ইউপি চেয়ারম্যান
লকলকে পাতার আড়ালে মাচায় ঝুলে আছে কচি লাউ। নিজেই কাঁচি নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন তিনি। একটার পর একটা লাউ কাটছেন আর রাখছেন ঝুড়িতে। কেবল লাউ-ই নয়, শিম, পেঁপে, বেগুন কিংবা কাঁচকলা নিজেই কেটে তার সবটাই বিলি করছেন সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষদের মধ্যে।
সারিবদ্ধ মানুষ বসে আছে। অপেক্ষা বাগান থেকে সদ্য তুলে আনা সবজির জন্য। সময় মতো সবার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজের হাতেই বিনামূল্যে তা বিতরণ করছেন তিনি।
এমন দৃশ্যের সঙ্গে এখন বেশ পরিচিত সাভারের তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
বাণিজ্যিকভিত্তিতে নয়। কেবল অসহায় মানুষদের মধ্যে বিতরণ করার জন্যেই বিঘার পর বিঘা ক্ষেতে সবজির চাষাবাদ করেছেন। এ রকম ব্যতিক্রমী নজির সৃষ্টি করেছেন আওয়ামী লীগনেতা, সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর।
দিন কয়েক ধরে এটাই সমরের নিয়মিত কাজ। সকালের আলো না ফুটতেই ক্ষেত থেকে সতেজ ও টাটকা শাক-সবজি তুলে নিজেই বিতরণ করেছেন গরিব ও খেটে মানুষের মধ্যে।
আজ সোমবার সকালেও এমন দৃশ্য দেখা গেল হেমায়েতপুর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে। সেখানে নিম্নবিত্ত মানুষ ছাড়াও তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে নিজের হাতে তিনি বিতরণ করেন নানা ধরনের শীতকালীন সবজি। বিনামূল্যে এমন উপহার পেয়ে দারুণ খুশি স্থানীয়রা।
বৃদ্ধ ঠেলাগাড়িচালক কেরামত আলী বলেন, ‘চেয়ারম্যানের হাত থেকে এমন উপহার পাব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। উপহার পাওয়া একটি লাউ হাতে তুলে দেখিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘দেহেন এমুন একটা লাউ কিনবার গেলিও ৭০ টাহা লাগত।’
অভিন্ন অনুভূতি পোশাক শ্রমিক রোকসানা বেগমের (২২)। তিনি বলেন, ‘দ্যাশ থিকা আইছি। নিজেগো জায়গা-জমি নাই। চেয়ারম্যান নিজের জমিতে আমাগো লাইগ্যা ফসল ফলায়া তা আবার নিজের হাতেই বিলি করতিছে। এইডা যে কত আনন্দের তা বুঝাতি পারব না।’
জমিরন বেওয়া নামের (৬৫) একজন ভিক্ষুক বলেন, ‘চেয়ারম্যান আমারে কোচ (আঁচল) ভর্তি করি শিম, বেগুন, কলা দেছে। হের লাইগ্যা দোয়া করি।’
সমাজের এমন প্রান্তিক কয়েকশ মানুষ বেশ কয়েকদিন ধরেই বিনামূল্যে এমন অভিনব উপহার পেয়ে বেশ খুশি।
স্থানীয় তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মীর আব্দুল বারেক বলেন, ‘আমি অনেক জায়গায় কাজ করেছি। কিন্তু স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করতে গিয়ে আমার জীবনের সব দারুণ ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি।’
ইউপি সচিব আরো বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর করোনার শুরুতেও মানুষের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা বাড়িয়েছেন। নিজেই ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ছুটে গেছেন মেহনতি মানুষদের মধ্যে। বন্যার সময়ও দলমত নির্বিবেশে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে এমন অসংখ্য মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি। বলতে পারেন তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে আইকন।’
মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর বলেন, ‘দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ করেছি। ছিলাম ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্র রাজনীতি থেকে এসে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সাভার উপজেলার মতো ব্যস্ততম ও জনবহুল জনপদে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। জনগণ আমার ওপর আস্থা রেখেছে, এটাই আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। আর সবাই এটা জানেন যে, আমার ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। নেই জীবনের কোনো পিছুটান।’
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর আরো বলেন, ‘কেবল সবজিই নয়, বিনামূল্যে বিতরণের জন্যে আমি হাঁসের খামার করেছি। যেখান থেকে প্রতিদিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে বিতরণ করা হয় সেই খামারের ডিম।’
‘দেশের আর্ত সামাজিক উন্নয়নে নিবেদিত হোন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের উদ্বুব্ধ করতেই এমন উদ্যোগ’ জানিয়ে ফখরুল আলম সমর বলেন, ‘কয়েক বিঘা পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করা হয়েছে কেবল সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে বিতরণ করার জন্যে। বিষমুক্ত সতেজ সবজির স্বাদ অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার এক অনন্য সুখ অনুভব করছি।’
তা ছাড়া সবাইকে পরিত্যক্ত জমি বিশেষ করে বাড়ির আঙিনায় নিজের প্রয়োজনের জন্যে হলেও শাক-সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান সমর।