বিডিনিউজ সম্পাদকের ৫০ কোটি টাকা ফ্রিজের নির্দেশ
বাংলাদেশের অন্যতম অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর অ্যাকাউন্টের ৫০ কোটি টাকা ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে নোটিশ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার ১২ দিনের মাথায় দেশের মর্যাদাসম্পন্ন পোর্টালটির প্রধান সম্পাদকের অর্থ ফ্রিজের নির্দেশ এলো ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজের আদালত থেকে।
দুদকের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা (জিআরও) জুলফিকার এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান আদালতে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজের আদেশ দেন।’
আজ রোববার রাতে জিআরও আরো বলেন, ‘আদালত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিষ্ঠানের নয়টি এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ও তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে করা ১৩টি এফডিআর (স্থায়ী আমানত) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দেন।’
গত ৫ নভেম্বর তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক। তাঁকে ১১ নভেম্বর দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। চিঠিতে বলা হয়, তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নিজের এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হিসাবে ‘বিপুল পরিমাণ টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন এবং বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে তাঁর বক্তব্য জানা প্রয়োজন।
তবে সময় চেয়ে আবেদন করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এ জন্য ১১ নভেম্বর তিনি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন। আবেদনের পর পুনরায় তলবি চিঠি ইস্যু করেন সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তা। পরে তিনি ২৬ নভেম্বর গিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
সেদিন দুদক থেকে বেরিয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘স্পষ্ট নয়’ উল্লেখ করে এক সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতে কাজ করা তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ‘আসলে একটা বিনিয়োগ হয়েছে, একটা কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে, বিনিয়োগ হওয়ার পর সেটা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। সেটা তারা (দুদক) খতিয়ে দেখবার চেষ্টা করছে। এবং আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, তারা দেখবে, খতিয়ে দেখবে।’
তবে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত দাবি করেছিলেন বিডিনিউজ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি ‘স্পষ্ট’। তিনি বলেছিলেন, ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল, সেই ব্যাপারে কমিশনে একটা অনুসন্ধান চলমান আছে। কোনো অভিযোগ এলে কমিশন তা যাচাই-বাছাই করে সেটি অনুসন্ধান করে থাকে। আশা করি, অনুসন্ধান করে প্রকৃত বিষয় বেরিয়ে আসবে।’
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই দেশের প্রথম ২৪ ঘণ্টার পূর্ণাঙ্গ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ ও তার প্রধান সম্পাদকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আবেদন আসে দুদকের পক্ষ থেকে।
এ সংশ্লিষ্ট আবেদনে বলা হয়, ‘তৌফিক ইমরোজ খালিদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও নিজের নামের হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা স্থানান্তর করেছেন। তিনি বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।’
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭’-এর বিধি ১৮ (সংশোধিত) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর ১৪ ধারার বিধান মতে তাঁর অপরাধলব্ধ অর্থের ব্যাংক হিসাব-এফডিআর ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা প্রয়োজন বলে দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়।