বিজয় শোভাযাত্রায় এমপিপুত্রের হামলা, মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত ২৫
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় এমপিপুত্র শিরহান শরীফ তমাল ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
আজ সোমবার সকালে ঈশ্বরদীর পোস্টঅফিস মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ঈশ্বরদী পৌর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জুবায়ের বিশ্বাস বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে ঈশ্বরদী পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা একটি বিজয় শোভাযাত্রা বের করেন। শোভাযাত্রাটি ঈশ্বরদী মহিলা কলেজের কাছাকাছি পৌঁছলে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ছেলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনির নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতে আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমরা তাঁকে বাঁচাতে গেলে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে ব্যাপক মারপিট করে। এতে আমিসহ আমার বাবা আতিয়ার রহমান বিশ্বাস, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মতলেব হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।’
জুবায়ের বিশ্বাস আরো জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুল মতীন, মতলেব হোসেন ও আবু সাঈদকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমালের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কারোর ওপর হামলা চালাই নাই। মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা করার প্রশ্নই ওঠে না। বরং পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টুর নির্দেশে পুলিশ অহেতুক আমাদের শোভাযাত্রায় হামলা করে নেতাকর্মীদের মারপিট করেছে।’
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রীর জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, ‘পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় সশস্ত্র অবস্থায় হামলা করে মুক্তিযোদ্ধাসহ নেতাকর্মীদের আহত করা হল। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ও বিচার দাবি করি। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতেই এই ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। পুলিশের সামনে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তারা যেকোনো মূল্যে আমাদের শোভাযাত্রাটি পণ্ড করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জুবায়ের বিশ্বাস ও এমপিপুত্র তমালের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এরই জেরে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় উত্তেজনা ও সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্প্রতি স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমপিপুত্র তমাল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জুবায়ের বিশ্বাসের অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই জের ধরে তমাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেন। জুবায়ের বিশ্বাসও পাল্টা রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে স্ট্যাটাস দেন। শোভাযাত্রায় হামলার ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা স্থানীয়দের।