বিএনপি ১২ বছর ধরে গণঅভ্যুত্থান দেখাচ্ছে : ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এই দেশে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, পরে গণআন্দোলন হয়েছে। বিএনপি ৬৯-এর পর আবার গণঅভ্যুত্থান দেখাবে, ১২ বছর ধরে দেখাচ্ছে। কখন দেখবো আল্লাহ মাবুদ জানে।’ আজ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে করোনাভাইরাসের সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব এখন আবার নতুন করে আন্দোলনের হাঁকডাক শুরু করেছেন। এখন আন্দোলনটা কোন বছর হবে? দেখতে দেখতে ১২ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর? একবার বলে এসএসসি পরীক্ষা, আবার বলে এইচএসসি পরীক্ষার পরে। আবার বলে রোজার ঈদের পরে কিংবা কোরবানির ঈদের পরে। কত ঈদ ও পরীক্ষা চলে গেল কিন্তু বিএনপির আন্দোলন তো চোখে পড়েনি।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বিএনপি উপনির্বাচন বয়কট করে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তারা আবারও আগুন সন্ত্রাসের পথে হাঁটছে। আন্দোলনের নামে সহিংস কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে আওয়ামী লীগ রাজপথে সমুচিত জবাব দেবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি সবকিছুতে সরকারের দোষ খোঁজে। আমি মাঝেমধ্যে ভাবি বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তারা আবার নাকি বলে, যে আওয়ামী লীগই দায়ী, কখন আবার বলে বজ্রপাতে মৃত্যুর জন্য শেখ হাসিনার সরকার দায়ী। সেটাই আমি ভাবছি। এটাও তারা করবে। ঘূর্ণিঝড় আসার সময় বলেছিল, সরকারের জন্য ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। বস্তিতে আগুন লেগেছে, সেটার জন্যও আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। আমরা আগুন লাগিয়ে মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি কেন করব? আগুন সন্ত্রাস তো তাদের ব্যাপার।’
করোনাভাইরাসের সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে বিএনপিকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিষয়ে সরকারের সচেতনতা এবং সতর্কতা নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন। তারা বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা করেন। বাজেটও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেওয়া হলো। এই টাকা কোথা থেকে আসছে? এটা কি বিরোধী দল দিচ্ছে? এটাতো সরকারি কোষাগার থেকে সরকারই জনগণকে দিচ্ছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রথম ঢেউ অতিক্রম করেছি, দ্বিতীয় ঢেউও অতিক্রম করতে চলেছি। জীবন ও জীবিকার সমন্বয় করে সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। এতে একজন মানুষও অনাহারে মারা গেছেন বলে আমাদের জানা নাই। সরকার অন্যান্য দেশের তুলনায় সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। এটা বিএনপিকে আর কতটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না। তারা কানে তুলা লাগিয়েছে, কিছুই শুনতে পায় না। তাদের চোখে ঠুলি, চোখেও দেখতে পায় না। ভালো কিছু তাদের চোখে পড়ে না। শুধু সমালোচনার জন্য দিনরাত বিষোদগার করছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি ফিলিস্তিনে ওষুধ পাঠিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। তাদের তো কতগুলো ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। তারা অভাবে আছে তা তো না। খুবই বড় বড় ওষুধ কোম্পানি আছে। তারা তো এই সময়ে করোনা চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করতে পারে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সীমান্ত এলাকাগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, প্রাণহানি বাড়ছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি স্টেবল এই কথা বলা যায় না। সংক্রমণ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। মৃত্যু ৩০, ৩৫ বা ৪০ বছরের কোটায় আছে। তাও বলা যায় না। করোনাভাইরাস আমাদের নিয়ন্ত্রণেই চলে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়।’
সময়মতো টিকা সংগ্রহ বিষয়ে আশা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে করোনা টিকা দিতে পারছে না। তারপরও অন্যান্য সোর্স থেকে সংগ্রহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টার কোনো কমতি নেই। ইনশা আল্লাহ অন্যান্য দেশ থেকে সময়মতো টিকা সংগ্রহ করতে পারব। সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। টিকার সংকট নিয়ে বিরোধীদল যেটা বলে আসছে সেটা এখানে সৃষ্টি হবে না।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রাজশাহীতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ রূপ নিয়েছে। সেখানে হাসপাতালে অক্সিজেনের এবং শয্যার কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরকার সেটা সরবরাহ করছে। এখনও ভারতে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই অবস্থার কারণ আমাদের সৃষ্টি হয় নাই। কারণ প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। তিনি ঝড়ের সময়ও যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। করোনা আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে এটা তাঁর মাথায় আছে। এই জন্য তিনি সব বিষয়ে যথাযথ নজর রাখছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেসব জায়গায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে আঞ্চলিক লকডাউন দিচ্ছেন।’
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে দলের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক রোকেয়া সুলতানা, কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।