বাবুনগরী ও মামুনুলের গ্রেপ্তার দাবিতে উত্তাল ঢাকা
বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান অবমাননার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেপ্তার দাবিতে আজ মঙ্গলবার উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে বিশাল মানববন্ধন করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬০টি সংগঠন।
মানববন্ধনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করায় বাবুনগরী ও মামুনুলকে তাত্ক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তারের দাবির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন এবং সাম্প্রদায়িক ভাষণ নিষিদ্ধ করা, পহেলা ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তাদের (হেফাজত নেতাদের) উচিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করা। অন্যথায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা উপযুক্ত জবাব দেবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘অপ্রত্যাশিতভাবে আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি, কতিপয় ধর্মান্ধ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। আমি তাদের এ অবস্থানের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের সতর্ক করছি যে বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতাকারী কাউকে আমাদের জনগণ ছাড়বে না।’
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক আবেদ খান, ইতিহাসের অধ্যাপক ও গবেষক মুনতাসীর মামুন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
রাজধানীর মৎস্য ভবন থেকে শুরু হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, শাহবাগ মোড় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট পর্যন্ত দীর্ঘ হয় এই সম্মিলিত মানববন্ধন কর্মসূচি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বাংলাদেশে একটা কুচক্রী মহল মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এটা বারবার হবে না। কোথা থেকে টাকা আসছে, কী তাদের এজেন্ডা তা এসব ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া উচিত। প্রশাসনের তদন্তের মাধ্যমে আসল ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং এই দেশের মাটিতেই তাদের শাস্তি দিতে হবে। তাদের একেবারে নির্মূল করে দিতে হবে। তারা যেন বারবার আমাদের স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘এবার যখন আমরা ধরব, ফাইনাল হয়ে যাবে। এবার আর কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নয়। আমরা মাঠে আছি, দেখে নেব তাদের। চোরের ১০ দিন, গেরস্তের এক দিন। আমরা এবার তাদের দেখে নেব। মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে নির্মূল করা হবে।’ এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান তিনি।
একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসরদের যথোপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, উগ্র মৌলবাদের আস্ফালন রুখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তিকে একতাবদ্ধ হতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে, জাতির পিতাকে যারা অবমাননা করেছে তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে চিরদিনের জন্য বিতারিত করতে হবে।’
রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারীরা বঙ্গবন্ধু ও সংবিধানকে অবমাননা করেছে মন্তব্য করে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘সংবিধানেই রয়েছে যে জাতির পিতার বিরুদ্ধে যদি কোনো কটূক্তি করা হয়, কোনো অসম্মান প্রদর্শন করা হয়, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার। অবিলম্বে আইনের আওতায়, সংবিধানের আওতায় এইসব দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সচেতন করে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় দীর্ঘ মানববন্ধন থেকে।
নাট্যব্যক্তিত্ব পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আমরা এই রাজাকারদের, এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীদের, সরকারের শত্রুদের, সংবিধানের শত্রুদের নির্মূল করবই।’