বাবার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে সন্তানদের সংবাদ সম্মেলন
বাবার অতিরিক্ত সম্পদ অভিলাসের শিকার হয়ে এক মেয়ে ও দুই ছেলে আজ আদালত ও সাংবাদিকদের পিছনে ছুটছেন। এরই মধ্যে ওই বাবা তার দুই সন্তানকে গুম করে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার মেয়ে।
তার বাবা খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সিকদার আবুল কালাম আজাদ। তিনি দীর্ঘদিন বড় পদে কর্মরত থেকে অবসরে গেছেন অনেকদিন আগে। এরই মধ্যে তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম মারা যান। তবে আগে থেকেই তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ ছিল সন্তান ও স্ত্রীর।
তার এসব কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ও তার নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে দুই ছেলে ও এক মেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার মেয়ে তাসনিম ফারজানা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আজাদের দুই ছেলে বরকত আল আজাদ ও রহমত আল আজাদ। তাদের বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার পানাইল গ্রামে। তবে বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বরকত আল আজাদ থাকেন বর্তমানে ঢাকায় ও মেয়ে তাসনিম ফারজানা স্বামীর কাছে ঢাকায় থাকেন।
এছাড়া ছোট ছেলে রহমত আল আজাদ থাকেন তার নানার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোট চাঁদপুরে। আর সেইখানে বিপুল পরিমাণ জমি নিয়েই বাবার সঙ্গে সন্তানদের বিবাদ বলে জানান দুই ছেলে ও মেয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারজানা বলেন, ‘তার বাবা খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সিকদার আবুল কালাম আজাদ। আমাদের নানার বাড়ির সম্পত্তির লোভে আমার দুই ভাইকে গত ১৬ অক্টোবর ঢাকা থেকে ডেকে ঝিনাইদহ নিয়ে আসেন জমিজমা মিটমাটের কথা বলে। সেখান থেকে মাগুরা ডিবি পুলিশ দিয়ে আমার দুই ভাইকে গুম করে। এরপর তাদের মাগুরা নিয়ে আসা হয়। সেখানে আমার দুই ভাইকে দুই দিন রেখে গত ১৮ অক্টোবর ফরিদপুর শহরের লাইফ কেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে এসে রাখা হয়। এরপর আবার মাগুরা ডিবি পুলিশের দল ও আমার বাবা ২০ নভেম্বর এসে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে সেখানে তত্ত্বাবধায়নে থাকা পরিচালক ৯৯৯ ফোন করে সহায়তা চাইলে তাদের কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। এর আগে ডিবি পুলিশ এবং তিনি তার দুই ছেলেকে বেদম প্রহার করে হাত ভেঙে দেওয়াসহ তাদের রক্তাক্ত করে। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।‚
এ সময় বড় ছেলে বরকত আল আজাদ বলেন, ‘আমদের দুই ভাইকে মাদকসেবী বানিয়ে মাগুরা ডিবি পুলিশ দিয়ে আটক করে নিয়ে আসা হয়। এর ভিতর আমার ছোট বোন ২৬ অক্টোবর কোথাও খুঁজে না পেয়ে একটি জিডি করেন ধানমন্ডি থানায়। এরপরে ৩১ অক্টোবর একটি পিটিশন মামলা করা হয়। এতে ঢাকার জজকোর্টের এক্সিকিউটভি ম্যজিস্ট্রেট একটি তল্লাশি পরোয়ানা জারি করে। এরই মধ্যে আমার বোন জানতে পারেন আমাদের আটক করে রাখা হয়েছে ফরিদপুরে। তখন তিনি ৪ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করে। হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি রুল জারি করে। আর এই কথা শুনে আমার বাবা ২০ নভেম্বর এসে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।
বরকত আল আজাদ বলেন, ‘পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা নাই যে সম্পত্তির কারণে এমন করে নিজ সন্তানদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। আমরা এখন বাবার হাত থেকে বাঁচতে চাই।‚
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকরা।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মো. বেলাল হোসেন জানান, আমরা ২০ নভেম্বর খবর পেয়ে লাইফ কেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যাই। আমরা সেখানে গিয়ে জানতে একটি রিট পিটিশন করা হয়েছে হাইকোর্টে তাদের নিয়ে। তারা সেখানে থাকাকালীন অবস্থায় তাদের আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।