বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন বিশ্বের বিস্ময় : তানভীর
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠতে আহ্বান জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তানভীর শাকিল জয় ঢাকায় গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি এবং পরে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করেন। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম বারের মতো সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইন বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিশেষ সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে কথা বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর নাতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট ফখরুল শাহীন।
এনটিভি অনলাইন : আপনার বেড়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাই?
তানভীর শাকিল জয় : আমি ১৯৭৪ সালের আগস্টে জন্মগ্রহণ করি এবং দুঃখজনক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে বিয়োগান্ত একটি ঘটনা ঘটে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমার দাদা এম মনসুর আলীসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। এরপর আমরা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করি। পরে ১৯৭৯ সালে আমার পিতা আমাদের নিয়ে দেশে ফেরত আসেন। দেশে আসার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়। যার কারণে পারিবারিকভাবে আমার বাবাকে আমরা সেভাবে কোনো দিনই পাই নাই। তিনি বেশির ভাগ সময়ই হয় রাজপথে, না হয় জেলে ছিলেন। আমার আম্মাই (মা) আমাদের মানুষ করেন।
এনটিভি অনলাইন : স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী ছিলেন আপনার দাদা। তিনি পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীও হন। তাঁরা যে আশা নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন এবং যেই সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে সেটা কি বাস্তবায়ন হয়েছে?
তানভীর শাকিল জয় : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে, সেই সময় মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন আমার দাদা। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট কিন্তু সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস অগ্রগতিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা করা হয়। যার ফলে আমরা দেখেছি ৭৫ থেকে ৯৬ দীর্ঘ ২১ বছর কিন্তু বাংলাদেশের সব অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে কিন্তু সেই স্বাধীনতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে তিনি শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ষড়যন্ত্র করে আবার ক্ষমতায় এলো। আবারও আমাদের উন্নয়নের চাকা থমকে গেল, দেশ জঙ্গিবাদের আস্তানা হয়ে গেল দুর্নীতির আখড়া হলো, হাওয়া ভবন তৈরি হলো। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আজকে আমরা ১৩ বছর ক্ষমতায় আছি। এই ১৩ বছরে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে, এটি আসলে বিশ্বের বিস্ময়। মেট্রোরেল হচ্ছে, পদ্মা সেতু তো দৃশ্যমান, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়ন বিশেষভাবে ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন দেওয়া হয়েছিল ভিশন ২০২১, সেটি আজকে বাস্তবায়ন হয়ে আমরা ২০৪১-এ চলে গেছি। এবং আমরা কয়েকদিন আগেই এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়ে গেছে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাবে। সুতরাং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কার্যক্রম কিন্তু অনেকটাই বাস্তব। তবে এটি সত্য কথা, আজকে যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যা না করা হতো, তাহলে হয়তো এই অর্জনগুলো আমরা আজ থেকে ২০ বছর আগেই করতে পারতাম। সুতরাং স্বাধীনতার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো হয় নাই, সেই ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের ঘটনার জন্য। তবে জাতির জনকের কন্যার জন্য আমরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি।
এনটিভি অনলাইন : আপনার বাবা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতিচারণা।
তানভীর শাকিল জয় : বাবার সঙ্গে আমার পারিবারিক স্মৃতি কম। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের সময়। ওই সময় আমার বাবাকে অত্যাচার করা হয়, আমার বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়। ওই সময় যখন আমি আমার বাবার কাছে জেলে যেতাম, তখন আমাদের সম্পর্কটা আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
আমার বাবার সবচেয়ে বড় যে গুণ, সেটি হলো তিনি বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। সবাইকেই গ্রহণ করতেন এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর যে গভীর সম্পর্ক এটি আসলে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সব থেকে বড় কথা করোনার সময় সবাই যখন ঘরে, তখন আমার বাবা করোনার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকায় গিয়েছেন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
এনটিভি অনলাইন : বাবার কোনো বিষয়টা সব থেকে বেশি মিস করেন?
তানভীর শাকিল জয় : প্রতিদিন রাতে বাবা এলাকার সব মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন। তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। সেই সময় আমি বাবার সঙ্গে থাকতাম। তাঁর উপদেশ নিতাম।
এনটিভি অনলাইন : আমরা জানি ১৯৫৪ সাল থেকে আপনার পরিবার ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন করে আসছে এবং জয়ী হচ্ছেন। আপনার বাবার কোন ইচ্ছেটা এখনো পূরণ হয়নি?
তানভীর শাকিল জয় : আমার বাবা যখন সংসদ ছিলেন তখন অনেক উন্নয়ন করেছেন। আমাদের এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল নদী ভাঙন। নদী ভাঙন থেকে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন আমার বাবা। নদী ভাঙন মুক্ত করেছেন। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আমার বাবার একটি স্বপ্ন ছিল আমার এলাকা সম্পূর্ণ নদী ভাঙনমুক্ত হবে। কিছু অংশ বাদ ছিল, সেটুকুর কাজ এখন চলছে। সেটুকু শেষ করতে হবে। চরেও পানির মধ্যে দিয়ে বিদুৎ আনার কাজ শুরু হয়েছে। আমার বাবার একটি ইচ্ছে ছিল কাজিপুরটা একটি আধুনিক উপজেলা হবে৷ বাবা যে অসম্পূর্ণ কাজগুলো রেখে গেছেন, সেগুলোই বাস্তবায়ন করা আমার লক্ষ্য।
এনটিভি অনলাইন : নতুন প্রজন্মের প্রতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আপনার কী বার্তা থাকবে?
তানভীর শাকিল জয় : দেশকে ভালোবাসতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠতে হবে। আপনি আওয়ামী লীগের পক্ষেও থাকতে পারেন, আবার সমালোচনাও করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠতে হবে। সবার সমান অধিকার থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে সবাই এ দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করবেন।