বহদ্দারহাটে সড়ক দখল করে কাঁচাবাজার, মানছে না সামাজিক দূরত্ব
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেও চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাজারে সড়ক দখল করে ব্যবসা করছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। ফলে রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। নগরীর চাঁন্দগাঁও ফরিদেরপাড়া ও বহদ্দারহাট আবাসিক এলাকার মানুষের চলাচলকারীদের পথ চলতে নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
বহদ্দারহাট বাজারের পাশে নিউ চাঁন্দগাঁও সড়কের দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে তরিতরকারিসহ নানা পণ্যের দোকান। এ ছাড়া রাস্তার মধ্যে ট্রাক, ভ্যান গাড়ি ও রিকশা রেখে যানজট সৃষ্টি করার কারণে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ দুর্বিষহ দিনযাপন করছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমাতে সন্ধ্যার পর দোকান বন্ধ রাখার কথা থাকলে এ সড়কে রাত অবধি রাস্তা দখল করে বেচাকেনা যেমন হচ্ছে তেমনি সড়কের ওপর ট্রাক, ভ্যান ও রিকশা রেখে দীর্ঘসময় জট তৈরি করে রাখে। ফলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে হাজারো মানুষের চলাচলকারী সড়কটি।
স্থানীয় লোকজন জানায়, নগরীর বৃহত্তর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনার জন্য এটি স্থায়ী বাজার নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু করপোরেশনের নির্মাণ করা মার্কেটে না বসে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রাস্তা দখল করে সড়কের দুই পাশে পণ্য বেচাকেনা করে। এ কারণে মুন স্টার মার্কেটের পাশ দিয়ে বৃহত্তর ফরিদারপাড়া, নিউ চাঁন্দগাঁও আবাসিক এলাকাসহ বহদ্দারহাটের আশপাশের চলাচলকারী কয়েক হাজার লোক ও যান চলাচলে দুর্ভোগে পড়েন। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ এসব বাজারের কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। নারী ও শিশুদের চলাচলে নিয়মিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিকবার অভিযান চালিয়ে সড়ক থেকে ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিলেও অভিযানের পর তারা আবার সড়ক দখল করে একই স্থানে বসে যায়।
স্থানীয় লোকদের অভিযোগ, এক শ্রেণির চাঁদাবাজ সড়কে বসা ব্যবসায়ীদের থেকে হাসিলের নামে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করে। এসব টাকা থেকে থানা পুলিশসহ বিভিন্ন স্থান ও ব্যক্তির হাতে পৌঁছানো হয়। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা তাদের উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয় না।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলা সড়কের বাজারের কারণে সিটি করপোরেশনের স্থায়ী ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি মুন স্টার মার্কেটের পাশ দিয়ে বৃহত্তর ফরিদেরপাড়া, নিউ চাঁন্দগাঁও আবাসিক এলাকার যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানে আলম, হাসিল উত্তোলনকারী ও ইজারাদার বদিউল আলম, আওয়ামী লীগ নেতা তসকির আহমদ ও মো. ইসা, মনির সওদাগর ও সিরাজ মিয়া রাস্তা থেকে ওঠা হাসিলের বড় অঙ্কের চাঁদার ভাগ নেন। এর একটি অংশ প্রশাসনের কাছে পাঠায়।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, সিটি করপোরেশন মার্কেটের দোকান খালি রেখে সড়ক দখল করে ব্যবসার কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
ফরিদারপাড়ার বাসিন্দা ইশতিয়াক হোসেন জানান, সড়কটি সবজি ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর। কোনো যানবাহন নিয়ে বাসায় আসা যায় না। এ সড়ক দিয়ে অসুস্থ লোকদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভীষণ দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী। ট্রাক, ভ্যান, রিকশা, ইটসহ নির্মাণ সামগ্রী রেখে সড়কটি বেদখল।
নিউ চাঁন্দগাঁও আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাট মালিক শোয়েব চৌধুরী জানান, বহদ্দারহাটে সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজারে না বসে সবজি ব্যবসায়ীরা সড়কের ওপর বাজার সৃষ্টি করেছে। সড়কের দুই পাশ ব্যবসায়ীদের দখলে। আবার সড়কের মধ্য ভাগ ট্রাকসহ পণ্য নিয়ে আসা যানবাহনের জট। সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা। কোনো প্রতিবাদ করলে হাসিল উত্তোলনকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমদ কবির জানান, করোনাভাইরাস আতঙ্কে দিন যাচ্ছে সবার। বহদ্দারহাট বাজারের মুন স্টার মার্কেটের আগে পরে এ সড়কে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। মার্কেটের অপরপাশে এশিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটে। প্রশাসনের কোনো নজর নেই। নরক যন্ত্রণার মধ্যে দিনাতিপাত করছে এলাকাবাসী।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম চাঁদা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করে জানান, কাঁচাবাজারে সামাজিক সুরক্ষার জন্য তাঁরা নিয়মিত মাইকিং করছেন। নতুন চারজন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কথা স্বীকার করে বদিউল আলম অস্থায়ী বাজার হিসেবে ব্যবসায়ীরা সাময়িক সময়ের জন্য বসেন বলে জানান। বাজারের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে না বলে দাবি করেন বদিউল।