বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের এক কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেইন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ এ মামলার এজাহার ও এফআইআর এসে পৌঁছালে আগামী ৩০ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এ ছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
এর আগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে মুনিয়ার বড় বোন বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেছেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা শুনেছি মুনিরা তাঁর বোনকে ফোনে জানিয়েছিলেন, তিনি বিপদে পড়েছেন। বোনকে সেখানে আসতেও বলেন তিনি। তারপর সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে মুনিয়ার বড় বোন দরজা বন্ধ পান। ধাক্কাধাক্কি করলেও দরজা খোলা হচ্ছিল না। এর কিছুক্ষণ আগে থেকে মুনিয়ার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ফ্ল্যাট মালিকের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দিয়ে পুলিশ দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে।’
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘এ ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-২৭(৪) ২১।’
ডিসি আরও বলেন, ‘মুনিয়া রাজধানীর একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লা শহরে। সেখানেই থাকে তাঁর পরিবার। মুনিয়ার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কেউ জড়িত কি না তাও দেখা হচ্ছে।’
এদিকে মামলার বাদীর বরাত দিয়ে গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন, ‘মুনিয়ার সঙ্গে একটি শিল্প গোষ্ঠীর এক কর্মকর্তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গুলশানের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মুনিয়া সেখানে একাই থাকতেন। মুনিয়ার সঙ্গে যার প্রেমের সম্পর্ক ছিল, তিনি ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মরদেহ উদ্ধারের পর গুলশান থানার পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। এরপর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মুনিয়ার ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো জব্দ করেছে।
রাতে ডিএমপির এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে ব্রিফিংকালে বলেন, ‘ওই তরুণীর মরদেহ আমরা ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছি। তাঁর বড় বোন নুসরাত জাহান আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। তাঁর যে মূল অভিযোগ তা হলো—ভিকটিমের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের দুই বছরের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় এক বছর ভিকটিমকে তিনি বনানীর একটি ফ্ল্যাটে রাখেন। এরপর মনোমালিন্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিম তাঁর বোনের কাছে ফোন করে জানান যে, যেকোনো মুহূর্তে তাঁর যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তিনি (মুনিয়া) আত্মহত্যা করেছেন কি না, বা সার্বিকভাবে কী কী পারিপার্শ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর জন্য যে আইনগত বিষয়—এগুলো আমরা নিচ্ছি।’