বরিশালে ব্যবসায়ীকে হাতুড়িপেটা : ছাত্রলীগনেতাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
রুহুল কুদ্দুস রাহাত নামের এক ব্যবসায়ীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগে বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলার ৫ নম্বর আসামিসহ সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ রোববার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার।
ওসি জানান, আহত রাহাতের বাবা গোলাম কবির বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ এবং ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করে মামলা করেছেন। পাঁচ নম্বর আসামি খালিদ হোসেন রবিন ও সন্দেহভাজন মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তিকে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন, মো. শুভ, স্বপন হাওলাদার, মো. জিসান ও রবিন এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২০ থেকে ২৫ জন।
প্রসঙ্গত, বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ি স্ট্যান্ডে গতকাল শনিবার রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত রুহুল কুদ্দুস রাহাত ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
আহত ব্যক্তির ভাই রাব্বি জানান, সন্ধ্যার পর বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন তাঁর সহযোগীদের নিয়ে মোল্লাবাড়ি স্ট্যান্ডে লিটন দাসের ইলেকট্রিক দোকানে হামলা চালিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এর পর পরই একই এলাকার আরেক ব্যবসায়ী রাহাতের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। পরে মোল্লাবাড়ি স্ট্যান্ডে রাহাতের সঙ্গে সুজনের দেখা হয়। ওই সময় তাঁর লোকজন রাহাতকে মারধর করেন এবং সুজন হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে পিটিয়ে আহত করেন। তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ধলু মোল্লা আহত ব্যক্তির বরাত দিয়ে বলেন, ‘সুজনের স্বজন তুহিনের কাছে রাহাত কয়েক লাখ টাকা পান। টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগনেতা আশিকুর রহমান সুজন বলেন, ‘রাহাতের সঙ্গে ভোলার তুহিনের লেনদেন আছে। রাহাতের কাছে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা পান তুহিন। তুহিন ও তাঁর ছোট ভাই ছাত্রলীগের শুভ এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেন। এরপর রাহাত ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে নানান পোস্ট দিতে থাকেন। রাহাত বন্ধু হওয়ায় এবং একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁকে ফেসবুকে মিথ্যাচার না করতে বলি। এরপর সে সন্ধ্যায় আমার ওপর হামলা চালায়। আর হামলা চালাতে গিয়ে সে নিজেই কোনোভাবে আহত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। তার সঙ্গে আমার কোনো লেনদেন নেই। এ বিষয়ে আমিও আইনের আশ্রয় নেব।’
ছাত্রলীগনেতা আশিকুর রহমান সুজন নানা কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত। গত বছরের এপ্রিল মাসে তিনি নিজের ফেসবুক লাইভে এসে বরিশাল জেলা প্রশাসককে ‘বোকা ও আহাম্মক’ বলে গালি দেন। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় সদর উপজেলার চরকাউয়া পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের কর্মী জাফর ইকবাল, মাহফুজ, পরিতোষ ও সুমনকে মারধর করেন সুজন। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মানবেন্দ্র সরকার বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন।
এ ঘটনায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ২৯ এপ্রিল আশিকুর রহমান সুজনকে বহিষ্কারের জন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে সুপারিশ করে চিঠি পাঠান। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারি আবার স্বপদে ফেরেন সুজন।