ফুঁ দিলেন কবিরাজ, বোতল উঁচিয়ে ধরলেন ৫০ হাজার মানুষ
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবকে পরোয়া না করে শনিবার কাকডাকা ভোর থেকেই সবাই হাতে বোতল নিয়ে ছোটেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রামের উদ্দেশে। ছুটে চলা সব বয়সী নারী-পুরুষের লক্ষ্য কথিত কবিরাজের কাছ থেকে ফুঁ দেওয়া পানি ও তেল সংগ্রহ করা। যে পানি ও তেল দিয়ে রোগ মুক্তিসহ মনোবাসনা পূর্ণ হবে বলে তাদের অন্ধ বিশ্বাস।
পাশের ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পাইলাবর গ্রামের বাসিন্দা ওই কবিরাজের নাম সবুজ মিয়া। তিনি বনের কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। জনশ্রুতি রয়েছে সপ্তাহে চার দিন বনের কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাকি তিন দিন কবিরাজি করেন।
শনিবার সকাল ৭টা না বাজতেই ৫০ সহস্রাধিক নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে উঠে চর পলাশ গ্রামের ওই বিশাল মাঠ। কবিরাজের জন্য মাঠে নির্মিত মঞ্চ থেকে কবিরাজের ভক্তরা বারবার কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন বার্তা মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন। মঞ্চে উঠে অবস্থান নেওয়া পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু ও সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু উপস্থিত লোকজনকে ধৈর্য ধরে শান্তিপূর্ণভাবে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন।
অবশেষে অপেক্ষার ঘটিয়ে বেলা ১১টার দিকে কাঠুরিয়া কবিরাজ এসে মঞ্চে উপস্থিত হন। তিনি সমাগত লোকজনের উদ্দেশে বলেন, হাজার হাজার ভক্তকে পৃথকভাবে ঝাঁড়ফুঁক দেওয়া সম্ভব নয়। আপনারা বোতল উঁচিয়ে ধরবেন। আমি মাইকে ফুঁ দেব। আর মাইকে আমার ফুঁয়ের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতলে ফুঁ কাজ করবে।
কবিরাজের বক্তব্য শুনে সমবেত হাজার হাজার নর-নারী তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরেন। তারপর কাঠুরিয়া কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেন। রোগবালাই মুসিবত দূর এবং মনোবাসনা পূরণের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরেন নর-নারীরা।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রেণু জানান, কিছু ভক্তের অনুরোধে এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন ঘটে। বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে কবিরাজকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলি।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আলেম এবং কিশোরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইমদাদীয়ার মোহাদ্দেস ও বড়বাজার শাহাবুদ্দিন ভূঁইয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ বলেন, এভাবে ফুঁ দেওয়া শরীয়তের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং শিরক ও বেদআতের শামিল। যা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।