ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরী হত্যার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
ফরিদপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আটক ইয়াসিন শেখ নিহত হয়েছে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট জোড়া ব্রিজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইয়াসিনের বাড়ি শহরের ওয়্যারলেস পাড়ায়। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ছবি সংগ্রহ করে ইয়াসিন শেখকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর জনতার সহায়তায় তাঁকে আটক করা হয়। গতকাল দিবাগত রাতে তাঁকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে আসামি ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময় হয়। এ সময় আসামি ইয়াসিন গুরুতর আহত হয়। সঙ্গে আহত হয় তিন পুলিশ সদস্যও। ইয়াসিনকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
পুলিশ বলছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৪ বছরের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যায় ইয়াসিন।
এদিকে কিশোরী ফাতেমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে জেলা পুলিশের ফেসবুক পাতায় ১৯ সেকেন্ড ও ১১ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে প্রকাশিত ওই ফুটেজে চিহ্নিত সন্দেহভাজন খুনির পরিচয় জানাতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ ফরিদপুর নামের ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ব্র্যান্ডিং মেলার মাঠ থেকে বাঁ হাত ধরে ফাতেমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে ইয়াসিন।
১৯ সেকেন্ডের প্রথম ফুটেজটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের। তাতে দেখা যায়, সন্দেহভাজন ওই খুনি মেলার শিশু কর্নারের দিকে একটি স্টলের পেছন দিক থেকে বের হয়ে বাঁশের খুঁটির কাছে এসে সন্দেহজনকভাবে উঁকি দিচ্ছে।
পরের ১১ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ফাতেমার হাত ধরে তাকে মেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন খুনি। তার বয়স হবে আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার পরনে হালকা সাদা রঙের কালো স্টেপের ফুলহাতা জামা ও ফেড করা জিন্স প্যান্ট। আর ফাতেমার পরনে ছিল কমলা রঙের একটি পায়জামা। পায়জামাটি পুলিশ ফাতেমার লাশের সঙ্গে পায়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিখোঁজ হয় কিশোরী ফাতেমা বেগম (১৪)। পরের দিন শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজের পাশে টেলিগ্রাম কার্যালয় চত্বর থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ফাতেমার মুখ থেতলানো ও জমাটবাঁধা রক্ত ছিল। বিবস্ত্র ফাতেমার গলায় ফাঁস দেওয়া ছিল। ফাতেমাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এখনো ফাতেমার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
ফাতেমার বাবার নাম এলাহি শরিফ। তিনি রিকশা চালানোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা বড়। ফাতেমা জন্ম থেকেই বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ফাতেমা পরিবারের সঙ্গে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত।
বিচারের দাবি
বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী ফাতেমার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবরে ফরিদপুরে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই খুনিদের যেকোনো মূল্যে খুঁজে বের করে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জোর দাবি ওঠে।
এ ঘটনায় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়। গতকাল রোববার দুপুরে নিহত ফাতেমার সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে স্মারকলিপি দেয়।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্মারকলিপি গ্রহণ করে ফাতেমা হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। এ সময় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক তানজিম আফরোজ, সহকারী শিক্ষক অহিদা রহমান, এ এন হাসান ইমাম, নিহত ফাতেমার মা ববিতা বেগম, বাবা মো. ইলাহি শরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক ফাতেমার পরিবারকে আর্থিকসহ সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
গতকাল রোববার বিকেলে একই দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো। অধ্যাপক শিপ্রা রায়ের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আবদুল মোতালেব, দিলীপ রায়, সাংবাদিক রেজাউল করিম, এমদাদ মিয়া, বলাই পাল, আবরার নাদিম ইতু প্রমুখ।