প্লাস্টিক কারখানায় দগ্ধ ৩৫, অধিকাংশের ‘মেজর বার্ন’, নিহত ১
ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার চুনকুটিয়ায় অবস্থিত প্লাস্টিকের কারখানাটিতে আগুন লাগে।
এ ঘটনায় দগ্ধ ৩৫ জনকে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। পরে তাদেরকে হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের চিকিৎসক ডা. বিধান সরকার।
গুরুতর দগ্ধদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে, তাঁরা হলেন- বশির, আবু সাঈদ, সাখাওয়াত, ফয়সাল, বাবুল, জাহাঙ্গীর, খালেক, রায়হান, সাহাবুল, সালাউদ্দিন, আলম ও রিয়াজ। এরা সবাই চুনকুটিয়া এলাকায় থাকেন এবং এই কারখানাতেই কাজ করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অধিকাংশের মেজর বার্ন হয়েছে। শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। শরীরেও অনেক পুড়েছে। অনেক রোগীর অবস্থাই আশঙ্কাজনক।’
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত একে একে ৩২ জন দগ্ধ এসে ভর্তি হয়েছেন। অনেকের অবস্থাই খারাপ মনে হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া পৌনে ৭টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে সোয়া এক ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্নিকাণ্ডে একজন মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। তবে তাঁর নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে তা তদন্ত শেষে বলা যাবে বলেও জানান তিনি।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির কাছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আগুন নেভাতে কেরানীগঞ্জ পোস্তগোলা ও সদরঘাট ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট কাজ করছে। পুলিশ, র্যাব ও এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
কারখানার শ্রমিক বাবুল ইউএনবিকে জানান, তাদের সঙ্গে কাজ করা তিন থেকে চার জন শ্রমিক কারখানার মধ্যে আটকা পড়ে আছেন। আগুনের কারণে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই কারখানায় আরেক দফা আগুন লেগেছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার পর পরই স্থানীয় লোকজন দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসেন। তাঁরা জানান, কারখানাটিকে ওয়ান টাইম জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। গ্যাসের বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
দগ্ধদের অধিকাংশেরই কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাদের শরীর পুড়ে গেছে। তাঁরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন। অল্প সময়ে এত বেশি সংখ্যক রোগী চলে আসায় বিভাগীয় চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হয়।
হাসপাতালে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
এদিকে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দগ্ধদের দেখতে আসেন কেরানীগঞ্জের সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এর আগে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কারখানাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্লাস্টিকের কারখানাটিতে প্রায় ৭০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। হঠাৎ করে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৩৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। কারাখানাটি চালানোর অনুমতি মালিকের ছিল না। তিনি বিনা অনুমতিতে কারখানাটি চালাচ্ছিলেন।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এ ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।