প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পর মানতে হবে যে ১২ নির্দেশনা
নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। তবে যখন খুলে দেওয়া হবে ১২টি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের। সেইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার রাতে এক পরিপত্র জারি করে এসব জানিয়েছে।
পরিপত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা সামগ্রী কিনতে অর্থ জোগানের বিষয়েও বলা হয়েছে।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা বা না খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি দেশে এখনো তৈরি হয়নি।
পরিস্থিতির উন্নতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকেন সে জন্যই এ পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
গতকাল বুধবার জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিদ্যালয়গুলোর মতো বাংলাদেশেও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাতসহ শিশুর শিখন যোগ্যতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা যত বেশি সময় বিদ্যালয়ের বাইরে থাকবে, তাদের বিদ্যালয়ে ফেরার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে। তাই জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিগগিরই বিদ্যালয় ফের চালু করা জরুরি।
পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর বিষয়ে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় এবং তদানুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১২ দফা নির্দেশনা :
১. বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উক্ত গাইডলাইনের আলোকে বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার আগে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক বিবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
২. শ্রেণিকক্ষসহ বিদ্যালয়ের পুরো আঙিনা সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও জীবাণুমুক্ত করা।
৩. বিদ্যালয়ের সমস্ত আসবাবপত্র সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও জীবাণুমুক্ত করা।
৪. শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র ‘ইনফ্রারেড থার্মোমিটার’ স্থানীয়ভাবে কিনে রাখা।
৫. সাবান, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি কিনে রাখা।
৬. ওয়াশব্লক ও টয়লেট সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
৭. হাত ধোয়ার জন্য মগ, জগ ও বালতি কিনে রাখা।
৮. অস্থায়ীভাবে হাত ধোয়ার স্থান নির্ধারণ করে হাত ধোয়ার পানি ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।
৯. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য শ্রমিকের যৌক্তিক সেবা ক্রয়।
১০. কোভিড-১৯ মেয়াদকালে ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় (এ খাতে বরাদ্দ না থাকলে)।
১১. বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত স্লিপ ফান্ড থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয়ভাবে সাশ্রয়ীমূল্যে উপরে বর্ণিত সামগ্রী বা সেবা কেনা বা সংগ্রহ করা যাবে।
১২. কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর নির্দেশিকার আলোকে স্ব স্ব বিদ্যালয় স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা নিয়ে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন গাইডলাইনের অনুসরণে এ পরিপত্র জারি করা হয়েছে এবং তা গাইডলাইনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের প্রচলিত আর্থিক বিধিবিধান অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ পরিপত্র বলবৎ থাকবে বলেও জানানো হয়।