প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেল না গৃহহীন পরিবারগুলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার জমিতে গৃহনির্মাণ’ উপখাতের আওতায় আটটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আর্থিক অনুমোদন এবং অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় দুটি, কসবা উপজেলায় একটি, নবীনগর উপজেলায় একটি ও আশুগঞ্জ উপজেলায় চারটি ঘর বরাদ্দ হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ চারটি উপজেলায় গৃহনির্মাণ বাবদ মোট ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছে ঘর নির্মাণের জন্য চিঠির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হয় এবং গত ৩০ জুনের মধ্যে গৃহনির্মাণ সম্পন্ন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট আশ্রয়ণ প্রকল্পকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর ও কসবা উপজেলায় ঘর নির্মাণকাজ শুরু হলেও আশুগঞ্জ উপজেলায় ঘটেছে ব্যতিক্রম ঘটনা। সংশ্লিষ্ট উপখাতে আশুগঞ্জ উপজেলায় চারটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট ইউএনওর দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঘরহীনরা বরাদ্দকৃত ঘর উপহার পেয়েও তাদের ভাগ্যে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার। এতে একদিকে যেমন সরকারের এই বিশেষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে, তেমনি ঘর বরাদ্দ পাওয়া মানুষগুলো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো তাদের নামে বরাদ্দের খবর পাওয়ার পরপরই একাধিকবার ছুটে যান আশুগঞ্জের ইউএনও মো. নাজিমুল হায়দারের কার্যালয়ে। কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের নামে বরাদ্দকৃত ঘরগুলো ইউএনওর অবহেলায় বরাদ্দ হওয়া অর্থ ফেরত চলে গেছে।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের একজন সদস্য মো. সোলাইমান। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার পেয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। কিন্তু ইউএনওর অবহেলায় আমি আজ ঘর থেকে বঞ্চিত হলাম।’
অন্য একজন বলেন, ‘আমি কয়েকবার ইউএনওর অফিসে গিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন, আপনাদের সঙ্গে পরে যোগাযোগ করা হবে।’
এ ছাড়া উপজেলা অফিস থেকে ‘এখন করোনা, এখন কীসের ঘর?’—এই বলে তাড়িয়ে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া অসুস্থ রেজ্জাকের স্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিয়েছেন, তার জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু যাদের অবহেলায় আমরা ঘর পেলাম না, তাদের বিচার চাই।’
ঘর বরাদ্দ পাওয়া রতন মিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রকল্প অফিস থেকে ফোনও দেওয়া হয়েছিল, আমরা ইউএনও অফিসে যোগাযোগও করি। কিন্তু করোনার কথা বলে আমাদের বিদায় করে দেয়।’
জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘর নির্মাণকাজ শুরু করা হলেও আশুগঞ্জে কেন হচ্ছে না—এ বিষয়ে আশুগঞ্জের ইউএনও মো. নাজিমুল হায়দার বলেন, ‘আমি চিঠি পাইনি।’
ইউএনওর কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একই সময়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সবাই চিঠি পেয়ে কাজও শুরু করেছে, কিন্তু আশুগঞ্জ কেন পায়নি? প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘অন্যান্য উপজেলায় চিঠি পেয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি চিঠি না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি দায়িত্ববান এই কর্মকর্তার অবহেলায় বরাদ্দের টাকা ফেরত চলে গিয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে কাজ, সেই চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। এসব কর্মকর্তার জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয়।’ তিনি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দোলা খান বলেন, ‘চিঠি না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ঢাকার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘরের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নির্ধারিত সময়ে উত্তোলন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আশুগঞ্জের ইউএনওকে ফোনেও দুই দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের একই চিঠি চারজন ইউএনওর কাছে পাঠানো হলেও তিনজন পেয়েছেন, অন্য একজন কর্মকর্তা পাননি, এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা প্রশ্নাতীত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গাফিলতির জন্য এমনটি হতে পারে।