প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার পরিকল্পনা রেজাউলের ইশতেহারে
নগরীর জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনসহ আটটি প্রতিশ্রুতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৩৭ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
মেয়র নির্বাচিত হলে রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁর কর্মপরিকল্পনায় ১০০ দিনের অগ্রাধিকার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এতে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নির্মূলে মহাপরিকল্পনা ও নগর উন্নয়নে ডেল্টা প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়নে যাতে ন্যূনতম বাধা ও দীর্ঘসূত্রিতা না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সঙ্গে বসে তা তদারকিতে অগ্রাধিকার দেব। বেদখলে যাওয়া খাল, নালা, নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করব।
জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থী উল্লেখ করেন, ‘প্রাসঙ্গিকভাবে বলতেই হয়, বহরদার বাড়ি তথা বহদ্দার হাটের বাসিন্দা হিসেবে এই সংকটের সবচে বড় ভুক্তভোগী আমি নিজে ও স্থানীয় অসংখ্য নিরীহ মানুষ।’ তিনি আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধতা ও জোয়ার জলের স্ফীতিরোধে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। সিডিএ, ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনসহ কিছু সেবা সংস্থা এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ওয়াসায় যুক্ত হয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প। এসব মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে অবশ্যই সর্বোচ্চ মনযোগ থাকবে।’
যানজটকে নগরীর বড় সমস্যা উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, নগরীতে সড়ক সুবিধার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষ করে আধুনিক সুবিধার যানবাহনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি এবং রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির মতো কায়িক শ্রমে চালিত বাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। তাছাড়া, সড়কের পাশে অপরিকল্পিতবাবে গড়ে ওঠা বহুতল দালানের অধিকাংশেরই নিজস্ব কোনো পার্কিং সুবিধা নেই। ফলে রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি রাখার কারণে মূল সড়কের অর্ধেকই বেদখলে চলে যায়। এতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়। মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হয় কোটি কোটি শ্রমঘণ্টা ও অপচয় হয় বিপুল অর্থের। নগরীর এ জটিল সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বসে যত দ্রুত সম্ভব সমাধানে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেব।
মেয়র প্রার্থী রেজাউল বলেন, নালা নর্দমা, খাল-নদী দখল সমস্যা মহামারির মতই ব্যাপক। ফুটপাত থেকে শুরু করে নালা, নর্দমা, খাল, নদী সব দখল হয়ে যাচ্ছে। জমির দাম যত বাড়ে, দখল বাড়ে আরো দ্রুত। এর মাঝে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সব নালা, নর্দমা, খাল, নদী উদ্ধার অভিযান চলছে। সবার সমন্বিত উদ্যোগে নাগরিকবান্ধব নগর গড়তে দ্রুত খাল, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে।
চট্টগ্রামকে পর্যটন রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে রেজাউল করিম বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৈসর্গিক শোভা, ঐতিহ্য, জীবন ও জীববৈচিত্র, লোকজ শিল্প-সংস্কৃতি দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সোনার খনি। এমনকি চট্টগ্রাম নগরীও বিশ্ব পর্যটকদের জন্য চমৎকার এক জনপদ। পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভার থাকা সত্ত্বেও আমরা এগুলো ব্যবহার করতে পারছি না শুধুমাত্র উদ্যোগ ও অবকাঠামো গড়ে তোলায় ব্যর্থতার কারণে। অথচ স্বল্প বিনিয়োগ, পরিচর্যা ও উপযুক্ত প্রচারের মাধ্যমে এ খাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে পর্যটন খাত ও সৈকত পর্যটনে আধুনিক সুবিধা যোগ করে এই খাত থেকে নগর উন্নয়নে বাড়তি আয়ের ওপর জোর দেব।
হোল্ডিং ট্যাক্স প্রশ্নে মেয়র প্রার্থী বলেন, নগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়ক বাতিসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা দেয়া সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ। আধুনিক চাহিদা ও বাস্তবতায় সিটি করপোরেশনকে আরো অনেক নাগরিক সেবার দায় টানতে হয়। সেবা খাতে আয়ের বড় উৎস হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর। গৃহকর নিয়ে নানা সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়। আবার শত শত কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বকেয়া পড়ে আছে। বিতর্ক অবসানে ডিজিটাল গৃহশুমারি করে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী উপরোল্লিখিত খাতগুলোকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন।
মেয়র নির্বাচিত হলে আরো যে ২৯টি কাজ তিনি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে সবের মধ্যে রয়েছে : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার চলমান প্রকল্প, মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে বন্দরসহ সব সেবাখাতের উন্নয়ন কাজে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে জোরদার ভূমিকা ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন। বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরিক পরিষেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু করা। রূপসী চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ ও ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না করে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখা। ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হব। সুনীল অর্থনীতির সম্পদ আহরণে সরকার যে ২৬টি খাত নির্ধারণ করেছে তার বেশিরভাগই চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা যাতে এই খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন এবং চট্টগ্রামের মানুষের যাতে কর্মসংস্থান হয়, তার পরিবেশ সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেব।
নগরীর উন্মক্ত স্থান বা সরকারি জমি লিজ নিয়ে আধুনিক ইকোপার্ক, থিমপার্ক, শিশুপার্ক গড়ে তুলে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করে নাগরিক এবং শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ, রাস্তার যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, হাইড্রোলিক হর্ন, মাইক বিশেষ করে রাত ১০টার পর মাইক ব্যবহার ও শব্দ দূষণ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার পকিল্পনা ব্যক্ত করেন রেজাউল।
উপসংহারে নৌকা মার্কার প্রার্থী বলেন, ‘অঙ্গীকারের স্বপ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সবার সহযোগিতা পেলে যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতব বলে আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী। আমার কিছুই পাওয়ার নেই, পারিবারিকভাবে সব পার্থিব অর্জন আমার আছে। সুযোগ পেলে নিজের মেধা-মনন, কর্ম সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার আসল অঙ্গীকার।’
ইশতেহার ঘোষণাকালে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।