পূজার কারণে পেছাল ঢাকার নির্বাচন, ১ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ
সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি মেনে নিয়ে অবশেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোট গ্রহণের জন্য নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে। নতুন তারিখ অনুযায়ী, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে আজ শনিবার সন্ধ্যায় চলতি বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার সময়সূচি দুদিন পিছিয়ে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন তারিখ অনুযায়ী, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আগের সূচি অনুযায়ী, ওই পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
বিকেল সোয়া ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত প্রায় সোয়া ৮টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টার নির্বাচন কমিশনের জরুরি বৈঠক শেষে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও সম্মত হয়েছেন। তাঁরা ১ তারিখের পরীক্ষা পিছিয়ে নিতে সম্মত হয়েছেন। সে কারণে কমিশনারদের সঙ্গে মিটিং করেছি এখন। তাঁরা (কমিশনাররা) সর্বসম্মতক্রমে নির্বাচন ৩০ তারিখ (জানুয়ারি) থেকে পিছিয়ে ১ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) করতে সম্মত হয়েছেন।’
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের জন্য ইসি যে তফসিল ঘোষণা করেছিল, সেখানে ভোটগ্রহণের জন্য আগামী ৩০ জানুয়ারি দিন নির্ধারিত ছিল। ওই তারিখকে কেন্দ্র করে প্রচার শুরু করেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা।
কিন্তু ভোটগ্রহণের এই সময়টাতেই রয়েছে সরস্বতী পূজার তিথি। ফলে পূজার মধ্যে ভোটগ্রহণ না করার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে প্রবলভাবে দাবি উঠে। এমনকি প্রার্থীরাও ভোট পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নানা যুক্তি তুলে ধরে এবং সময়ের দিক বিবেচনায় নিয়ে ৩০ জানুয়ারি ভোটের দাবিতেই অনড় ছিলেন।
এর মধ্যেই গত ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের নির্ধারিত তারিখ পেছানোর জন্য রিট করেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, ‘২৯ ও ৩০ জানুয়ারি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে। কিন্তু ঢাকায় সিটি নির্বাচন উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ জন্য সিটি নির্বাচন পেছানোর জন্য রিটটি করা হয়েছে।’
তবে গত ১৪ জানুয়ারি ভোটের দিন পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। এরপর রিটকারী আপিল বিভাগে যান। সেখানে এখনো শুনানি হয়নি। কিন্তু তার আগে আজ সন্ধ্যায় আগের অবস্থান থেকে সরে এসে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ দুদিন পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে সিইসি রাতে বলেন, ‘একটি জটিল পরিস্থিতি ছিল। তাই প্রস্তুত করার জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শেয়ার করেছি যে, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে তাদের পরীক্ষা যেটা ১ তারিখে (জানুয়ারি) শুরু হওয়ার কথা, সেটা পরিবর্তন করা সম্ভব কিনা। যাতে কারো ধর্মীয় অনুভুতিতে কোনো রকমের ব্যাঘাত বা আঘাত না লাগে।’
‘সেটি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও সম্মত হয়েছেন। তাঁর (মন্ত্রীর) দপ্তরের কাজ শেষ করে তারা (মন্ত্রণালয়) ১ তারিখের (জানুয়ারি) পরীক্ষা পিছিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। সে কারণে কমিশনাদের সঙ্গে মিটিং করেছি এখন। তাঁরা (কমিশনাররা) সর্বসম্মতক্রমে নির্বাচন ৩০ তারিখ (জানুয়ারি) থেকে পিছিয়ে ১ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) করতে সম্মত হয়েছেন।’
নির্বাচন কমিশনের প্রধান আরো যোগ করেন, ‘ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২৯ তারিখ (জানুয়ারি) পূজার ঐচ্ছিক ছুটি ছিল। সেখানে ৩০ তারিখ (জানুয়ারি) পূজার দিন নেই, সে প্রেক্ষাপটে আমরা ভোটের দিন ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিলাম।’
এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন, উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামও ভোটের তারিখ বদলানোর বিষয়টি বিবেচনায় আনতে বলেন।