পুড়ে গেছে দুই জামাতা, কাকে ধরবেন বুঝতে পারছিলেন না শ্বশুর
নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার মজিবুর রহমান তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর ছোট মেয়ের স্বামী আমজাদ হোসেন দৌড়াতে দৌড়াতে বাসার সামনে এসে শ্বশুরকে বললেন, ‘আমাকে ধরেন আব্বা। হাসপাতালে নিয়ে চলেন দ্রুত। আমার সব পুড়ে গেছে।’
ছোট জামাতার হাত ধরামাত্রই মজিবুর রহমান দেখতে পেলেন, বড় জামাতা ইমান হোসেন দৌড়াতে দৌড়াতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। তাঁর শরীরে কোনো জামাকাপড় ছিল না তখন। সব পুড়ে গিয়েছিল। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মজিবুর বলছিলেন, ‘সে সময় কোন (মেয়ের) জামাই রেখে কোন জামাইকে ধরব, বুঝতে পারছিলাম না। তারপর চিৎকার করি আমি। এরপর লোকজন জড়ো হয়ে তাঁদের দুজনকে ধরে।’
তবে ছোট জামাতা আমজাদ হোসেন যখন দৌড়াতে দৌড়াতে আসেন, তখন তাঁর শরীরে একটি পুড়ে যাওয়া জামা ছিল। মাথায় পুড়ে যাওয়া টুপি লেপ্টে ছিল। ওই পুড়ে যাওয়া জামাটি এখনো বাড়ির পাশের একটি নারিকেল গাছে ঝোলানো রয়েছে। ওই জামাটির পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে মজিবুর রহমান বলছিলেন, ‘এই জামাটার দিকে তাকালে আমার কলিজাটা কেঁপে উঠছে। তবুও এখান থেকে চলে যেতে ইচ্ছা করছে না।’
মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার দুই জামাইয়ের বয়স প্রায় একই। ৩০ বছরের মতো হবে। ওরা সব সময় একসঙ্গে থাকত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত সব সময়। ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরিও করত একসঙ্গে। ছোট জামাতা গাড়িচালক আর বড় জামাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করে। কাল দুজন একসঙ্গে নামাজে গেল। আর ফিরল পোড়া মানুষ হয়ে। আমার বড় মেয়ে মৌটুসি আর ছোট মেয়ে মুক্তা পাগল হয়ে গেছে। তারা বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে!’
এসব ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন মজিবুর রহমান। এর মধ্যেই মনটা আরো বিষিয়ে তুলছেন স্থানীয়রা। মজিবুর বলেন, ‘একেকজন এসে একেক কথা জানতে চায়। আমার দুই (মেয়ের) জামাই-ই মারা গেছে কিনা। তাদের লাশ কখন আসবে। এসব শুনতে শুনতে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। অথচ যতজন মারা গেছে, তার ভেতর এখনো ওদের নাম শুনিনি।’
মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যুর পর বর্তমানে ২৩ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তাঁদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি আজ শনিবার গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।
যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা হলেন—মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস বেপারী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), রাশেদ (৩০), জয়নাল (৩৮), মাইন উদ্দিন (১২) ও জুয়েল (৭)। তাদের মধ্যে গতকাল দিনগত রাতেই শিশু জুয়েলের মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আজ ভোরের দিকে মারা যান আরো ১০ জন এবং সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান আরো একজন। পরে দুপুরের দিকে মারা যান আরো দুজন। যা নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানি ১৪ জনে দাঁড়িয়েছে।