পুলিশের হাতে মা-বোন ‘লাঞ্ছিত’, অনুশোচনায় কিশোরের আত্মহত্যা
চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় এলাকায় একটি বাড়ি থেকে সালমান ইসলাম মারুফ (১৬) নামে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে আগ্রাবাদ বাদামতলী মসজিদ গলিতে আসামি ধরাকে কেন্দ্র করে মারুফ, তাঁর মা রুবি আক্তার ও বোন নেহা আক্তারের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ সময় মারুফের মা রুবি আক্তার মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। তখন মারুফের মায়ের সঙ্গে বোন নেহা আক্তারকেও পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মা ও বোনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এই অনুশোচনায় মারুফ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর বিক্ষোভের মুখে ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলালকে প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। ঘটনা তদন্তে সিএমপির পক্ষ থেকে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ কুমার দাশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক উল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সন্দেহভাজন হিসেবে মাদক বিক্রেতাকে আটক করতে যায় পুলিশ। ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
মারুফের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কয়েকদিন আগে বাসা থেকে মারুফের কিছু জিনিস চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় এক লোককে সন্দেহ হয় তার। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অপরিচিত এক লোক মারুফের বাসার আশপাশে ঘুরাঘুরি করছিল। তখন সেই লোকের সঙ্গে মারুফের কথা কাটাকাটি হয়।
পরে সাদা পোশাকে ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে সালমান মারুফকে ধরতে যায়। এ সময় পুলিশের কাছ থেকে মারুফকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় মা রুবি আক্তার ও বোন নেহা আক্তার।
মারুফের বড় বোন নেহা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘মারুফকে ছাড়িয়ে নিতে ডবলমুরিং থানার পুলিশ সদস্য হেলাল তাদের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। নইলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে মা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান।’
‘এ সময় মারুফকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি ও মা পুলিশের হাত-পায়ে ধরে অনেক অনুনয়-বিনয় করি। কিন্তু আমাদেরকে লাথি মারা হয়, শারীরিক নির্যাতন করা হয়’, অভিযোগ করে বলেন নেহা আক্তার।
মারুফের বাবা রিকশাচালক বলে জানান তার মা রুবি আক্তার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলে দিনে চাকরি করে রাতে লেখাপড়া করে। পুলিশ তারে ইয়াবা দিয়া ফাঁসায় দিতে চাইছে। এলাকার সবাই এটা শুনছে। আমার ছেলে কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত না।’
রাতে পুলিশ মারুফের লাশ উদ্ধার করতে এলে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এবং পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন।