পাবনা সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী উদযাপিত
পাবনার সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক-শতবর্ষ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান যেন সর্বদলীয় মিলনমেলায় পরিণত হল। সে এক অভূতপুর্ব দৃশ্য। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত কোনো ভেদাভেদ নেই। যেখানে রাজনৈতিক স্লোগান বা কথাবার্তা একদমই নেই। সবাই সবার বন্ধু, কেউবা সিনিয়র বন্ধু আবার কেউবা জুনিয়র বন্ধু।
‘শতবর্ষের টানে, মিলেছি এক প্রাণে’ এই স্লোগানে আজ শনিবার সকালে পাবনার অন্যতম প্রচীন বিদ্যাপিঠ ‘সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয়ের’ প্রাক-শতবর্ষ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।
পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল রহিম লাল সকালে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। প্রায় এক মাস আগে থেকেই অনুষ্ঠানের প্রস্ততি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক-শতবর্ষ পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক, পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারোফ হোসেন।
যৌথভাবে সঞ্চালনায় ছিলেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও পুনর্মিলনী কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু এবং সদ্যবিলুপ্ত পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ মাসুম বগা।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্র দেশের প্রখ্যাত হার্ট সার্জন প্রফেসর ডা. লুৎফর রহমান, যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুস সামাদ খান মন্টু, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান তোতা, ক্রিস্টাল গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সুলতান আহম্মেদ, এআর গ্রুপের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসিনা আক্তার রোজী, সানফ্রানসিসকো প্রবাসী পারভেজ খসরু, মো. আজাদ খান, মো. শামসুল হক, শ্যামল দত্ত, জহুরুল ইসলাম, আহমেদ হুমায়ুন কবীর তপু, সোহেল রানা প্রমুখ।
এ সময় স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক খবির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষককে ক্রেস্ট এবং উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। এ ছাড়া প্রয়াত ছাত্রদের পরিবারকে ক্রেস্ট এবং উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
দিনের দ্বিতীয় অংশে বিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের স্মরণে বক্তারা জীবনের স্বার্থে পুনর্মিলনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
পুনর্মিলনী সংগঠন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা গোলাম ফারুক এনটিভিকে বলেন, ‘আমার জীবনের এক অনন্য দিন, কারণ আমি তিন দশকের পরে আমার অনেক শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি অনেকের মুখ ভুলে গিয়েছিলাম তবে পুনর্মিলনীটি স্কুলের প্রথম দিনের স্মরণে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ হয়। এটি আমাকে আমার জীবনের পিছনে নিয়ে যায় এবং আমাকে আবারও চেতনা দেয়।’
দেশের প্রখ্যাত হার্ট সার্জন প্রফেসর ডা. লুৎফর রহমান বলেন, ‘স্কুলে আসার পরে আমি আমার বিগত স্কুল জীবনের স্মৃতিকাতরতায় মধ্যে পড়েছি। পুনর্মিলনের মাধ্যমে আমরা বহু বছর পরে আমাদের স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। এটি সবার মাঝে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়।’
প্রায় চার দশক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী খবির উদ্দিন (৮৫) বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্কুলের স্বার্থে, ছাত্রদের স্বার্থে কাজ করেছে এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবাই সুন্দরভাবে একটি অনুষ্ঠান করতে পেরেছে। সবাই এক মঞ্চে বসেছে। এর চেয়ে বড় আর কিছু নেই।’
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আগত শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। এর আগে জাতীয় সংগীত এবং অনুষ্ঠানের থিম সং দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তার আগে সকালে ঘোড়ারগাড়ি, ব্যান্ড পার্টি এবং ‘ভুভুজেলা’ বাজিয়ে একটি বর্ণাঢ্য বিশাল শোভাযাত্রা সারা শহর প্রদক্ষিণ করে।