পাবনায় প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ, বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা
প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে পাবনায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ শনিবার সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে গেছে কয়েকগুণ।
শীতের কামড় থেকে বাঁচতে এলাকার ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা আবহাওয়া অফিস জেলায় এবার বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে।
এদিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গত দুদিনে শিশু বিভাগের দুই ওয়ার্ডে ২৫০ জন রোগী শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রঞ্জন কুমার দত্ত।
আবহাওয়াবিদরা জানান, গত দুইদিন ধরে এ অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আরো দ- তিন দিন চলতে পারে।’
এদিকে শীতের এই ‘পিক আওয়ারে’ দুস্থ মানুষরা শীতবস্ত্র না পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। বিশেষ করে পদ্মা ও যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে। এসব দুর্গম এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতাই পৌঁছেনি।
২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিয়ে পাঁচ শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে।
এদিকে, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা অভিযোগ করেন, এবার সরকারি বা বেসরকারিভাবে এখনও কেউ তাদের মতো শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে না।’
এই শীতে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে পাবনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে পাবনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ‘বরাদ্দ পেলেই আমরা শীতবস্ত্র বা কম্বল বিতরণ করব।’
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রঞ্জন কুমার দত্ত বলেন, ‘প্রচণ্ড শীতে ঠাণ্ডার কারণে শিশুরা ভাইরাসজনিত রোগ, শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়ায়ও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই পেড্রিয়াট্রিক ইউনিট ও ডায়েরিয়া ইউনিটে রোগীদের ভর্তি গত দুই দিনে অনেক বেড়েছে।’
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ রোগী শীতজনিত রোগে ভর্তি হয়ে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে আছে।
এর মধ্যে ইউসুফ শেখ নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘এমনিতে আমার শ্বাসকষ্ট তার উপর বেড না পাওয়ায় মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। এতে আমার শ্বাসকষ্ট আরো বেড়েছে।’
হাসপাতালে কর্মরত সেবিকা লাকি খাতুন বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে ৪০ জনের বিছানার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে রোগী রয়েছে আড়াইশ। আমরা কীভাবে এত বিছানা দেব। ঠাণ্ডা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট থাকবে।’
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, ‘শনিবার তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি থাকলেও জেলায় ঘন কুয়াশার সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। আগামী দুই থেকে তিন দিন শীত অব্যাহত থাকতে পারে।’
এ ব্যাপারে জানতে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।