পান খেতে গিয়ে আর ফেরেননি কামাল
কামাল হোসেন (৪৯) থাকতেন রাজধানীর চকবাজারের চুরিহাট্টার হাজি ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের ভবনের চার তলায়। ভাত খাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে তিনি ভবনের নিচে নেমেছিলেন পান খেতে। কিন্তু পান খেয়ে আর উপরে উঠা হয়নি তাঁর। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান কামাল।
২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার নিজ গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে স্ত্রী হালিমা আক্তারকে কথা দিয়েছিলেন কামাল হোসেন। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাগও গুছিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রীকে কথা দিলেও বাড়ি ফিরে নিজের ছয় মেয়েকে আর শেষ দেখা দেখতে পারেননি তিনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় কামালের স্ত্রী হালিমা আক্তার ও ভাই নুরুল আলম এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানান। হালিমা আক্তার বলেন, ‘ওই দিন সকালে আমি ফোন দেই উনারে। ফোন দিলে আমাকে বড় মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যাইতে কয়। তখন আমি উনাকে বলি, আমি যাইতে পারতাম না। টাকা নেই আমার কাছে। কিন্তু উনি আমাকে টাকা ধার করে নিয়ে যেতে বলেন। ফোন রাখার সময় বললেন, চিন্তা কইরো না। আমি বাড়ি আসব কাল। মেয়েদের দেখতে মন চাইছে।’
হালিমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছয় মেয়ে। তিন মেয়ে বিয়ে দিছি। বাকি আছে তিন মেয়ে। তিনজনই লেখাপড়া করে। আমার কোনো ছেলে নেই। গ্রামের লোকজন আর আমার ভাইয়েরা সাহায্য করে। সেজন্য দুটো খাইতে পারি। খুব কষ্ট হয় চলতে। ওই সময় শুনছিলাম, সরকার কত কিছু করবে। কিন্তু কেউ খোঁজ নেয়নি, কেউ কিছু করেনি।’ কথা বলতে বলতে কেঁদে উঠেন হালিমা।
কামাল হোসেনের ভাই নুরুল আলম বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম। তখন ভাই আমাকে বলল, নিচে যাচ্ছে পান খেতে। ভাই প্রচুর পান খেত। সেই পান খেতে গিয়েই আমার ভাই মরল। আগুনের ঘটনা শোনার পর আমরা ভাইকে খোঁজাখুজি শুরু করি। কিন্তু ভাইকে কোথায় না পেয়ে সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ খুঁজে পাই। মুখে হালকা আগুন লেগেছিল। এ ছাড়া পুরো শরীর আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়েছিল। ডাক্তারও বলেছিল, আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়ে ভাই মারা গেছে।’
রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশ দিয়ে ইসলামবাগের নিজের জুতার কারখানায় যাচ্ছিলেন মোশারফ হোসেন (৪৩)। ওই সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে আগুনে পুড়ে নিহত হন তিনি। কথা প্রসঙ্গে মোশারফের ভাগ্নে পারভেজ হোসেন বলেন, ‘আমিও চুরিহাট্টায় ব্যবসা করি। সব সময় শঙ্কায় থাকি। কখন না আগুনে পুড়ে মরি। মামা মারার যাওয়ার পর কত রকম গল্প শুনেছিলাম। সরকারসহ কত কত বেসরকারি এনজিও সাহায্য করবে। পরিবারের লোকজনকে চাকরি দেবে। অথচ আজ পর্যন্ত কেউ খোঁজ নেয়নি। সে না হয় না নিল। কিন্তু এই শহরে আমরা যারা বসবাস করি তাদের জন্য নিরাপদ নগরী গড়ে তুলুক সরকার।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় প্রথমে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। পরে হাজি ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক দুই ভাইয়ের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তারা দুজনই এখন জামিনে আছেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দিতে পারিনি আমরা। তবে দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব আমরা।’
কবির হোসেন আরো বলেন, ‘তবে এখনো পর্যন্ত আমাদের যে ফাইন্ডিং আছে, তাতে জানা গেছে ; প্রথমে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়। তারপর রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।’