পাটকলের সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে যাবে সরকারের ঘনিষ্ঠদের হাতে
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী ৫১ হাজার শ্রমিকের চাকরিচ্যুত করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সরকার দেশে করণাকালীন এই চরম দুঃসময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী ৫১ হাজার শ্রমিকের চাকরিচ্যুত করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান জাতীয় ঐক্যফন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আবদুর রব, ড. আবদুল মঈন খান, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. রেজা কিবরিয়া ও অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী।
আজ মঙ্গলবার বিবৃতিতে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় খাতের সবগুলো পাটকল সরকার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাটকলগুলোয় বর্তমানে স্থায়ী শ্রমিক আছেন ২৪ হাজার ৮৮৬ জন। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত বদলি ও দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। অর্থাৎ ৫১ হাজার কর্মীর পরিবারের অন্তত আড়াই লাখ মানুষের জীবনে এক চরম বিপর্যয় তৈরি করা হচ্ছে। এমন একসময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যখন করোনার ভয়ঙ্কর অভিঘাতের ফলে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া দূরে থাকুক, সরকার বর্তমানে কর্মে নিযুক্ত মানুষকেও কর্মচ্যুত করছে।’
নেতারা আরো বলেন, ‘পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, গত ৪৮ বছরে সরকারকে এই পাট খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। অথচ এক ওয়াট বিদ্যুৎ না কিনে গত ১০ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ বিরাট কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। পাট খাতে যে লোকসান হয় সেটার জন্য শ্রমিকরা কোনোভাবেই দায়ী নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত আর সব খাতের মতো প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণেই এই শিল্পগুলোতে লোকসান হয়। সেই ব্যর্থতার মূল্য আজ দিতে হচ্ছে শ্রমিক ভাইদের।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আরো বলেন, ‘‘এই চাকরিচ্যুতির আগেও দফায় দফায় শ্রমিকদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে তাদের বকেয়া মজুরি আদায়ের দাবিতে। তথাকথিত ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ রাষ্ট্রটি তার অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করা নাগরিকদের বেতন মাসের পর মাস বাকি রেখেছিল। এখন সেই শ্রমিকদের ওপর নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।’’
সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাটকলগুলো পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় চলবে। সরকারের অতীত রেকর্ড থেকে এই আশঙ্কা করার খুবই যৌক্তিক কারণ আছে, শেষ পর্যন্ত এই পাটকল এবং এর সব সম্পত্তি সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হবে নামমাত্র মূল্যে। সরকারের এই সিন্ধান্ত দেশের পাটকল শিল্পকে ধ্বংস করে পশ্চিম বাংলার মৃতপ্রায় পাটকল কারখানাগুলো চালু করার নীলনকশারও অংশবিশেষ বলে প্রতীয়মান হয়।’
‘সবকিছু বিবেচনায় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি করছি। এই সিদ্ধান্ত রদ করার লক্ষ্যে পাটকলগুলোর শ্রমিক ভাইদের যে কোনো কর্মসূচির প্রতি আমরা সংহতি জানাই’, যোগ করা হয় বিবৃতিতে।