পাখির বাসার জন্য আমবাগান ভাড়া
চাকরি কিংবা অন্য যেকোনো কারণে মানুষ ঠিকানা পরিবর্তন করলে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। কিন্তু পাখির জন্য বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা শুনেছেন? এ রকম ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। শামুখখোল পাখির বাসা তৈরির জন্য তিন লাখ ১৩ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য আম বাগান ভাড়া নিয়েছে সরকার।
আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীর বাঘা উপজেলা। এ উপজেলার বেশির ভাগ জায়গায় রয়েছে আমবাগান। আম বিক্রি থেকে সারা বছরের পারিবারিক খরচ মিটিয়ে থাকে আমচাষিরা। উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের পাঁচ কৃষকের আমবাগানে পাঁচ বছর ধরে বাসা বেঁধে আছে শামুকখোল পাখি। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে তারা গাছে গাছে বাসা বাঁধে। প্রজননকাল শেষে ডিসেম্বরে তারা চলে যায় দল বেঁধে। হাজার হাজার পাখির অবস্থানের ফলে আমের উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাগানমালিকরা। এমনকি মারাও যাচ্ছে আমগাছ।
বাগান মালিকদের একজন সানার আলী জানান, পাখিদের কারণে তাঁর বাগানের গাছে আম হচ্ছে না, গাছও মরে যাচ্ছে। যে বাগান থেকে তিনি বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পেতেন, সে বাগান থেকে পাঁচ বছর ধরে এক টাকার আমও বিক্রি করতে পারেননি।
ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা প্রথম দিকে গাছে বাসা বাঁধতে পাখিদের বাধা দিলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা রুখে দাঁড়ায়। তারা কমিটি তৈরি করে পাখিদের নিরাপদ বসবাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে। তাদের এই তৎপরতায় বাগানের মালিক ও স্থানীয়দের মধ্যে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
খোর্দ্দ বাউসা অতিথি পাখি রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শামুখখোল পাখির জন্য আমবাগান মালিকরা আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথমদিকে তারা বিষয়টি মেনে নিতে না পারলেও এখন পাখির জন্য তাদের মধ্যেও ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে তারাও এখন দর্শনার্থীদের সচেতন করেন। কেউ যাতে ঢিল ছুড়ে পাখিদের বিরক্ত করতে না পারে, সেজন্য তাঁরাও এখন কাজ করছেন।’
এদিকে, পাঁচ বছর ধরে আম বাগান মালিকদের ক্ষতির বিষয়টি জানার পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পাখির বাসা তৈরির জন্য পাঁচ বাগান মালিককে গত এক বছরের জন্য ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ দিয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, গত ১ নভেম্বর পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বন অধিদপ্তরের অনুন্নয়ন খাত থেকে পাঁচজন বাগান মালিককে পাখির বাসার জন্য মোট তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা ইজারা বাবদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমবাগানে শামুকখোল পাখির বাসার জন্য আমচাষিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যে পাঁচজন আমবাগান মালিক এই বরাদ্দ পাচ্ছেন তাঁরা হলেন খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের মঞ্জুর রহমান, সানার আলী, শাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও ফারুক আনোয়ার।
মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রের পর গত শনিবার পাখির অবস্থা দেখতে বাগানে যান বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান, রাজশাহী সামাজিক বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক মেহেদী হাসান, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার হেলিম রায়হান ও বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর। এ সময় তাঁরা বাগান মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
পাখি যত দিন আমবাগানে বাসা বাঁধবে, তত দিন পাখি কলোনি তৈরির জন্য বাগান মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে জানিয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।