পাকুন্দিয়ায় আর্তমানবতার সেবায় চার তরুণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে যখন মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তখনই কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চার তরুণ এস এম রায়হান, এস কে রাসেল, ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম ও ডা. হাবিবুল্লাহ মারজানের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ মানুষের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে।
এই চার তরুণ প্রথমে ফেসবুকে 'ভয়েস অব পাকুন্দিয়া’ নামে একটি পাবলিক গ্রুপ খোলেন। আর সেই গ্রুপের মাধ্যমে পাকুন্দিয়া উপজেলার চিকিৎসক, যারা কাজ করেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁরাও এই তরুণদের ডাকে সাড়া দেন। তখন তাদের নিয়ে গঠন করেন 'ভয়েস অব পাকুন্দিয়া ডক্টর'স টিম নামে একটি টেলি চিকিৎসা সেবার প্লাটফর্ম।
গত ৮ এপ্রিল থেকে ১৫ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ প্লাটফর্মটি। প্রতিদিন ফোন করে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন দেশ-বিদেশে থাকা পাকুন্দিয়া উপজেলার অসংখ্য মানুষ।
পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতির ফলে অসহায় কৃষকদের কৃষি পরামর্শ দেওয়ার জন্য এবার অভিজ্ঞ কৃষিবিদদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কৃষি পরামর্শ বিষয়ক টিম ভয়েস অব পাকুন্দিয়া কৃষকের জিজ্ঞাসা'।
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের সব জমিকে উৎপাদনের আওতায় আনতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকেই এই চার তরুণও কৃষককে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাকুন্দিয়া উপজেলায় যেন খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এই টিমটি।
তাদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে জানতে চাইলে 'ভয়েস অব পাকুন্দিয়া’ ফেসবুক গ্রুপের এডমিন এস এম রায়হান বলেন, 'প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।
চলমান লকডাউনের কারণে যখন সব কিছু স্থবির হয়ে গেছে, যখন আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছিলাম না, তখন অবসর সময়কে কাজে লাগানোর জন্য ঘরে বসেই কিছু করার চিন্তা করছিলাম। তখন আমিসহ আমার তিন বন্ধু এসকে রাসেল, ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম ও ডা. হাবিবুল্লাহ মারজানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। তখন তাঁরাও অমার আহ্বানে সাড়া দেয়। আর আমরা চারজন মিলে ফেসবুকে ভয়েস অব পাকুন্দিয়া নামে একটি পাবলিক গ্রুপ খুলে সচেতনতার পাশাপাশি মানুষের সেবার জন্য কাজ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, করোনাভাইরাসের মহামারির ফলে পাকুন্দিয়ার কোনো জনগণ যেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমরা ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানাই, যারা এই দূর্যোগে এগিয়ে এসেছেন। তারাই আমাদের প্রাণ। তাদের সহযোগিতায় পাকুন্দিয়ায় আমরা এত দূর এগিয়ে এসেছি। তা ছাড়া কৃষিবিদদেরকেও ধন্যবাদ জানাই যারা এই দুঃসময়ে কৃষকদের সুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।' যোগ করেন এস এম রায়হান।
ভয়েস অব পাকুন্দিয়া ডক্টরস টিমের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. হাবিবুল্লাহ মারজান। আর ভয়েস অব পাকুন্দিয়া কৃষকের জিজ্ঞাসা টিমের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন আরিফুল ইসলাম।
এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক অাইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি মনে করি এই চার তরুণের উদ্যোগ উপজেলাবাসীর জন্য এক ইতিবাচক নজির সৃষ্টি করেছে, উপজেলার অন্য তরুণদের জন্য তারা উদাহরণ হিসেবে হাজির হয়েছে।'