পরিস্থিতির অবনতি হলে কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার : ওবায়দুল কাদের
অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পরিস্থিতির যদি আরো অবনতি হয়, তাহলে জনস্বার্থে সরকার আবারও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি মালিকদের স্বাস্থ্যবিধি এবং শর্ত মেনে গাড়ি চালানোর অনুরোধ করছি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ভিজিলেন্স টিম, মোবাইল কোর্টসহ টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে অর্ধেক আসন খালি রাখা, বর্ধিত ৬০ শতাংশ ভাড়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক পরিধানের বিষয় তদারকির আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি যাত্রীসাধারণকে অনুরোধ করছি, আপনারা অতিরিক্ত যাত্রী হবেন না। অর্ধেক আসন খালি রাখুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে টিকেট কাটুন। নিজে সংক্রমণ থেকে বাঁচুন, অপরকে বাঁচান।’
মন্ত্রী বলেন, ‘হুড়োহুড়ি বাড়তি যাত্রী হয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দেশকে আরো সংকটে নিমজ্জিত করতে পারে। আমি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংকটে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পরিস্থিতির যদি আরো অবনতি হয়, তাহলে জনস্বার্থে সরকার আবারও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকলেও লকডাউন শিথিল করছে এবং কোথাও তুলে নিয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘পবিত্র মক্কা-মদিনা-মসজিদুল আকসাও ধীরে ধীরে মুসল্লিদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জীবনের পাশাপাশি জীবিকা দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ থাকলে জীবনের গতিপথে নেমে আসবে স্তব্ধতা। অর্থনীতি হয়ে পড়বে স্থবির। তাই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বেছে নিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের অনিবার্য প্রয়োজন সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। নিজের সুরক্ষা, প্রকারান্তে পরিবার, সমাজ ও সহকর্মীর সুরক্ষা দেবে। তাই প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে সচেতন ও সুরক্ষিত থাকি ঘরকে করে তৈরি সুরক্ষার দুর্গ।’
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এমন সাহসী নেতৃত্ব আমাদের সবার পাশে আছেন, তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তাঁর প্রতি আস্থা রাখুন, ভরসা রাখুন। আমরা সংকট কাটিয়ে উঠব, ভোরের আলোয় আলোকিত হবে দশদিগন্ত ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির মিথ্যাচারে যোদ্ধাদের মনোবল নষ্ট হচ্ছে
করোনা সংকটে সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মিথ্যাচারের’ বক্তব্য মহামারির বিরুদ্ধে সামনে থেকে লড়া যোদ্ধাদের মনোবল নষ্ট করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার সংকটের শুরু থেকে সব দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তুলে সংক্রমণ রোধ, আক্রান্তদের চিকিৎসা, টেস্ট ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিসহ ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আকস্মিক সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। আমরা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সংকট সমাধানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। গড়ে তোলা হয়েছে সুসমন্বয়। কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত চিকিৎসা নেটওয়ার্কসহ সচেতনতা তৈরিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। খাদ্য সহায়তা, আর্থিক সহায়তাসহ নানান উদ্যোগের ফলে আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত একজন মানুষ না খেয়ে মরেনি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের সংকট সমাধানের সাহসী ও মানবিক প্রয়াস প্রশংসিত হচ্ছে। আর বিএনপি খুঁজে পাচ্ছে সমন্বয়হীনতা। নিজেরা অসহায় কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্লজ্জভাবে ব্যর্থ হয়ে দায়িত্বহীন বক্তব্য রাখছে, বিষোদ্গার করছে, যা প্রকারান্তে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা ও আক্রান্তদের মনোবল নষ্ট করছে।’
এ সময় বিএনপিকে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম আর নির্বাচনে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ভয় পায়। তাই জনগণ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গণমাধ্যমে চর্বিত চর্বণ করছে; দুর্যোগকালে অসহায় মানুষের পাশে না থেকে নিজেদের জনরোষ থেকে বাঁচাতে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে। এটা তাদের উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার, যা মানসিক বৈকল্য ছাড়া আর কিছুই নয়।’
কাদের আরো বলেন, ‘যে দলের নেতাদের মধ্যে সমন্বয় নেই, নিজেদের অফিসে নিজেরা আগুন দেয়, কর্মীরা নেতাদের পেটায় তারা সময়ের কথা বলে! এ দেশে দুর্যোগে গণমানুষের পাশে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যায়, এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হাতের তালু দিয়ে আকাশ ঢাকার অপচেষ্টা ও মিথ্যাচার বিএনপির ঐতিহ্য।’