নেত্রকোনা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাবে ৯২৫ পরিবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার হাওর এলাকাসহ ১০ উপজেলায় ৯২৫ ছিন্নমূল অসহায় পরিবার জমিসহ সেমিপাকা ঘর পাচ্ছে। আগামী ২০ জুন ওই সমস্ত পরিবারের কাছে জমির দলিল হস্তান্তর করবে জেলা প্রশাসন।
এদিকে, ঘর বরাদ্দ পেয়ে বেশ আনন্দেই দিন কাটছে হাওরাঞ্চলের সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষের। অন্যের বাড়িতে জন্ম নিয়ে অন্যের বাড়িতেই বেড়ে উঠা মানুষগুলো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হাওর অধ্যুষিত মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীসহ ১০ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এর আওতায় বরাদ্দকৃতদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর বুঝিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয় বাড়ে এমন কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতিটি পরিবারকে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ঘর প্রতি দুটি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দা রয়েছে। রয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও। সরকারের এই প্রকল্পে জমিসহ একেকটি ঘর যেন একেকজন গৃহহীন মানুষের বাস্তবে পরিণত হওয়া স্বপ্ন। গৃহহীনরা পাকা দালান পাবে, এটি তারা কখনো কল্পনাও করেনি। এমতাবস্থায় ঘর পাওয়ার আনন্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
জেলার ১০ উপজেলায় প্রথম দফায় ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে মোট ৯৬০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র মানুষকে। এবার দ্বিতীয় ধাপে জেলার ১০ উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে ৯২৫টি ঘর। এর মধ্যে দুর্গাপুরে ৩৫টি, জেলা সদরে ৪৪টি, বারহাট্টায় ২৫টি, কলমাকান্দায় ৫০টি, আটপাড়ায় ৫০টি, কেন্দুয়ায় ৫৬টি, মোহনগঞ্জে ৭৫টি, মদনে ৮০টি, খালিয়াজুরীতে ৪০০টি ও পূর্বধলায় ২০টি। ওই সমস্ত ঘরের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওই সমস্ত ঘর নির্মাণ কাজ জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকিতে নির্মিত হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নির্মানাধীণ ঘর পরিদর্শন করেছেন।
বারহাট্টা. আটপাড়া, খালিয়াজুরী, পূর্বধলা,মোহনগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নির্মিত ঘর ঘুরে দেখা গেছে, ওই সমস্ত ঘরে হতদরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ বসবাস করছেন। তারা কেউ রিকশা চালান, কেউবা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আবার কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বারহাট্টার সাহতা গ্রামে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরের বাসিন্দা বড়গাঁওয়া গ্রামের বিলকিস বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই, পাকা ঘরের চিন্তা কোনোদিনই করতে পারি নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমরারে ঘর কইরা দিছেন। তারে আল্লায় আরও অনেক দিন বাঁচাইয়া রাখুক এই দোয়াই করি।’
একই ধরনের কথা কলেন আটপাড়ার ভরতুষী গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বাসিন্দা উপজেলার দেওগাঁও গোবিন্দপুরের হারেছ পাগলা। তিনি বলেন, ‘পাকাঘরে ঘুমাইবাম কোনো দিন চিন্তাও করতে পারিনি। আল্লাহর রহমতে প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই সুযোগ করে দিছেন। শেখ হাসিনার জন্য আমরা সবাই দোয়া করি, তারে আল্লায় গরিবের সেবা করার সুযোগ দেইন।’
এভাবেই নিজেদের অনুভূতির কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর ঘরের বাসিন্দা পূর্বধলার নারায়নডহর গ্রামের হতদরিদ্র গরির অসহায় পরিবারের মানুষ।
নেত্রকোনার পূর্বধলার নারায়ণডহর গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নির্মিত ঘর আজ শুক্রবার দুপুরে পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপের ঘরগুলো দরিদ্র পরিবারের মধ্যে আগেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার ১০ উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে ৯২৫টি নির্মিত ওই সমস্ত ঘরের কাগজপত্র ও জমির দলিল মালিকদের কাছে আগামী ২০ জুন বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ওই সমস্ত ঘর যাতে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে নির্মিত হয় এবং দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে সেভাবেই নির্মাণ করা হচ্ছে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম, সহকারী কমিশনার ভূমি নাসরিন আক্তার সেতু, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
জেলার গৃহহীন ৯২৫টি পরিবারের স্বপ্ন এবার সত্যি হওয়ার পথে। এভাবেই একে একে পূর্ণ হবে সব গৃহহীন মানুষের স্বপ্ন, আস্তে আস্তে ঘুচে যাবে দুঃখ-দুর্দশা এমনটাই প্রত্যাশা এলাকার সর্বস্তরের মানুষের।