নির্বাচিত সরকার না থাকায় চলছে স্বেচ্ছাচারিতা : নজরুল ইসলাম
প্রকৃত নির্বাচিত সরকার না থাকায় দেশে ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্বৃত্তায়ন চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন তিনি।
যুবদলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিক উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু নিয়ে সরকারের দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করে না জনগণ। সরকারের জবাবদিহিতা না থাকায় সব জায়গায় অরাজকতা চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে সময়মতো কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
এই সরকার, তাদের অনুগত ও ফরমায়েশি নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আজকে বাংলাদেশ করোনায় আক্রান্ত। কী দুর্ভাগ্য আমাদের দেশে কতজন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং কতজন মৃত্যু হয়েছে সেই তথ্য সরকার যা দিচ্ছে জনগণ তা বিশ্বাস করে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা এটাও দেখতে পাচ্ছি সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না, যে সরকারের নৈতিক ভিত্তি নেই; সেই সরকারের আমলে তাদের মন্ত্রীদের ভোট দিতে কষ্ট হয়, তাদের দলের নেতাদের ভোট দিতে কষ্ট হয় এবং সবাই স্বেচ্ছাচারী হয়ে যায়। যার প্রমাণ আমরা দেখলাম কক্সবাজারে মেজর সিনহার ঘটনা এবং কয়েকদিন আগে আমরা দেখলাম একজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তার ঘটনা।
‘এই যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, এই মনোভাব দূর হওয়া কিংবা সম্রাট-পাপিয়া আরো যে নেতারা, তাদের দুর্নীতি, অন্যায়-অনাচার থেকে বের হওয়ার একটাই পথ। আর সেটা হলো জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর সেটা সম্ভব শুধুই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। আর তার জন্য প্রয়োজন ক্ষমতায় একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকা ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন থাকা। সেজন্য জনগণের দাবি নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে এবং একটি যোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে যাদের নির্বাচিত করবে তারা রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। এবং তাদের যেহেতু জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে, জনগণকে জবাবদিহিতা করতে হবে, সেহেতু সেই দলের কোনো মন্ত্রী কিংবা এমপি বা সেই দলের কোনো নেতা দুর্নীতিবাজ কিংবা স্বেচ্ছাচারী হতে পারবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে এই ঢাকা শহরে মাত্র শতকরা পাঁচ ভাগ মানুষ ভোট দিতে যায়। তার মানে ভোট প্রক্রিয়া, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন এই প্রক্রিয়াগুলোর ওপর মানুষ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে, মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ নিরাশ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ মানুষ গণতন্ত্র সম্পর্কে হতাশ হয়ে যাচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধের সমন্বিত ফসল গণতন্ত্রকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আর সেই রক্ষা করার লক্ষ্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি জাতীয়তাবাদী যুবদল অতীতের মতো এই লড়াইয়ে এবারও সামনের সারিতে থাকবে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা চাই দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের স্বার্থে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজ জনগণের খুবই প্রয়োজন। জনগণ চায় তাদের মাঝে দেশনেত্রী ফিরে আসুন এবং তাদেরকে নেতৃত্ব দিন।’
বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের অনেক মন্তব্য আছে যেটা নিয়ে মন্তব্য করার কোনো প্রয়োজন বোধ করি না। কারণ মানুষ তাঁর কোনো মন্তব্যকে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু একটা প্রশ্ন করতে চাই তাঁকে। তাঁরা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন তারা কি পদত্যাগ করেছিলেন? নাকি তারা রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে ছিলেন? এখন তো ২১ বছর হয়নি। তাই তাদের মুখে এসব কথা শোভা পায় না।’
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদসহ ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।