নিম্ন আদালতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দেওয়ায় নিম্ন আদালতে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার জেলা জজ, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবীরা এ বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে আইনজীবীরা বলেন, ‘অবৈধ রায় মানি না, অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, দিতে হবে, দিতে হবে।’
বিক্ষোভে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী হান্নান ভূঁইয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। কিন্তু তাঁকে জামিন দেননি আপিল বিভাগ। আমরা এই অবৈধ রায় মানি না, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।’
হান্নান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা মহানগর দায়রা জজকোর্ট থেকে সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ কর্মসূচি করার সময় পুলিশ বাধা দেয়। পরে আমরা সেখান থেকে ফিরে এসে মহানগর দায়রা জজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করি।’
অপর আইনজীবী আবদুল খালেক মিলন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন না দেওয়ায় আমরা সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের আদালতে বিক্ষোভ করব। উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’
বিক্ষোভ মিছিলে অ্যাডভোকেট নেহার হোসেন ফারুক, মুক্তা আক্তার, নাসরিন বেগমসহ একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের দেওয়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সর্বসম্মতিক্রমে জামিন নাকচ করে দিচ্ছি। মেডিকেল বোর্ডকে তাঁর (খালেদা জিয়া) প্রপার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নিতে বলছি।’
আদালতকক্ষ থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আদালত স্বীকার করে নিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। তবু কেন জামিন দিলেন না, আমরা জানি না। কেন এই আদেশ দিয়েছেন, বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
রায়ের পর ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ওই মামলায় গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। এরপর গত ১৪ নভেম্বর সাতটি গ্রাউন্ডে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। ১৭ নভেম্বর আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ২৫ নভেম্বর শুনানির পর বিচারক সেটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে তাঁর বিষয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু সেদিন প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় আদালত ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করে শুনানির জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন।