নিজের অসুস্থতাই সাবিহাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে সেবার
ছোটবেলায় সব সময় অসুস্থ থাকত মেয়েটি। মায়ের কোলে চেপে প্রতিনিয়ত ছুটতে হতো চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক কানে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে যখন শরীর পরীক্ষা করতেন, তখনই অসুস্থ অবস্থায় সে হারিয়ে যেত কল্পনার জগতে। কল্পনা করত, বড় হয়ে সেও এভাবে মানুষের সেবা করছে। চিকিৎসক হওয়ার লালিত স্বপ্নের শুরু তখন থেকে।
বলছি দিনাজপুরের সাবিহা আক্তারের কথা। সাবিহার সেই স্বপ্ন ধরা দিয়েছে বাস্তব জীবনে। তিনি এবার সুযোগ পেয়েছেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার।
সাবিহার বাবা সুজা মিয়া বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) দিনাজপুর উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রহরী। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মানকৌর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। তবে চাকরির সুবাদে দিনাজপুরেই ছোট্ট এক ঘরে সংসার পেতেছেন। ঘর যেন এক ছোট্ট চিলেকোঠা। স্ত্রী, ছেলে ও একমাত্র মেয়ে সাবিহাসহ মোট চারজনের সংসার সুজা মিয়ার। অভাবের সংসারে তিনি স্বপ্ন দেখেন, তাঁর মেধাবী সন্তানরা একদিন অনেক বড় হবে। বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে। বাবার সেই আশা পূরণে সর্বদাই চেষ্টা করেছেন সাবিহা। লেখাপড়ার শুরু থেকে বাবার ভরসার অন্যতম জায়গা দখল করেছেন তিনি। প্রমাণ করেছেন, নৈশ প্রহরীর মেয়ে হয়েও অদম্য মেধা আছে তাঁর।
অন্যসব মেয়েদের থেকে নিজেকে সব সময় আলাদাভাবে চিনিয়েছেন সাবিহা। পিইসি থেকে এইচএসসি সবখানেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। পিইসি ও জেএসসিতে জিপিএ ৫, এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ এবং ২০২০ সালে এইচএসসিতে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছেন। স্কুল জীবনে সব সময় প্রথম হতেন সাবিহা। সর্বশেষ এবারের (২০২০-২১ সেশন) মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় দিনাজপুরের এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
সাবিহার বাবা ১৫ বছর ধরে দিনাজপুর সুইহারি ড্রাইভারপাড়া এলাকায় ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। চারজনের সংসার চালাতেই হিমসিম খান তিনি, সেখানে সাবিহা আজ তাঁর স্বপ্নের উচ্চশিখরে। অন্যসব শিক্ষার্থীরা যখন কোচিং প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত, তখন সাবিহা ব্যস্ত থাকতেন পড়ার টেবিলে। বাবার অল্প আয়ের টাকায় নিজেকে মানিয়ে নিয়ে পড়ালেখা করেছেন।
সাবিহা সহযোগিতা নিয়েছেন তাঁর বড় ভাইয়ের। বড় ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সাজু মোল্লা সব সময় বোনের পেছনে ছিলেন ছাঁয়া হয়ে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত বড় ভাই ছিলেন একাধারে শিক্ষক, গাইড ও বন্ধু। কেননা অল্প বেতনে চাকরি করা বাবার সামর্থ ছিল না প্রাইভেট পড়ানো কিংবা কোচিং করানোর। ছোট বোন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় বেশ খুশি বড় ভাই সাজু।
অভাবের সংসারে এতদূর কীভাবে? জানতে চাইলে সাবিহা বলেন, ‘বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এ পর্যন্ত এসেছি। মা সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার। অভাবের সংসারে যেভাবে আছি, সেখান থেকেই আমাকে ভালো কিছু করতে হবে।’
সাবিহার বাবা সুজা মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে এবার দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। এতে আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না। আমার মেয়ের জন্য আমি গর্ব করি। সাবিহা ডাক্তার হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারে, সৃষ্টিকর্তার কাছে সেই ফরিয়াদ জানাই।’