‘নার্স রিমা খুন হননি, আত্মহত্যা করেছেন’
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইউনাইটেড হাসপাতালের নার্স রিমা প্রমাণিককে (১৯) খুন করা হয়নি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন—এমন তথ্য উঠে এসেছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে। আজ শুক্রবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা।
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দি গ্রামের সেন্টু প্রমাণিকের মেয়ে রিমা। তিনি ভৈরবের সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি এইড-নার্স হিসেবে দুই বছর ধরে কর্মরত ছিলেন হাসপাতালটিতে। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়ভাবে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। তাঁর স্বজনরা হাসপাতালটিতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়।
ঘটনা জানতে বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের প্রেসিডেন্ট ও গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্সের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ ভৈরবে আসেন এবং পুলিশ প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ রিমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই সোমবার সকালে ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল অ্যান্ড অর্থোপেডিক সেন্টারের নার্স রিমা প্রামাণিকের মরদেহ ওই হাসপাতালের কেবিন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন ভোর ৪টার দিকে রিমা হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ২০৩ নম্বর স্টাফ আবাসিক কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। তবে, পুলিশে খবর দেওয়ার আগেই রিমার ঝুলন্ত মরদেহ নামিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রিমার কক্ষ থেকে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’ লেখা একটি চিরকুট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পুলিশের হাতে আসে। পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করে।
এদিকে স্বজনরা দাবি করে, ছুটিতে থাকা রিমাকে হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হানিফুর রহমান সুমন ফোনে জরুরিভাবে ডেকে এনে ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যার পর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রিমার বাবা সেন্টু প্রামানিক বাদী হয়ে ১২ জুলাই মঙ্গলবার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হানিফুর রহমান সুমন ও নার্স ইনচার্জ লিজা বেগমসহ অজ্ঞাত পরিচয় দুই-তিনজনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই দিনই পুলিশ হানিফুর রহমান সুমনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের কাছে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইতোমধ্যে রিমান্ড শেষে সুমনকে আদালতে সোপর্দ করলে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর মামলার পর থেকে নার্স ইনচার্জ লিজা পলাতক আছেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ভৈরব থানার ওসি মো. গোলাম মোস্তফা জানান, রিমা আত্মহত্যা করেছেন বলে মামলাটি খারিজ হয়ে যাবে, এমন নয়। তিনি কেন এবং কী কারণে অথবা কার প্ররোচনায় আত্মহত্যা করলেন—এসব বিষয় তদন্ত করা হবে। তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি জেনে রিমার বাবা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। রিপোর্ট কী এসেছে, কেন এমনটি এসেছে, তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে হাসপাতালের এমডি সুমন মেরে ফেলেছেন। ঘটনার দিন রাত ৩টায় আমার মেয়ে এমডি সুমনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তার এক ঘণ্টা পর রিমা কেন আত্মহত্যা করবে?’ বিষয়টি রহস্যজনক বলে দাবি করেন তিনি।