নওগাঁয় প্রথম করোনা শনাক্ত, আক্রান্ত হয়েছেন এক সেবিকা
নওগাঁয় প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্ত ওই রোগী নওগাঁর রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সেবিকা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ল্যাবে করোনা পরীক্ষায় ওই সেবিকার আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। নওগাঁর সিভিল সার্জন মো. আখতারুজ্জামান আজ শুক্রবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ওই সেবিকার সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক, অন্যান্য সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনি অন্য যেসব মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন, তা যাচাই করার কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত ওই সেবিকার বয়স ২৫ বছর। তাঁর শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য বিভাগ তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রামেক হাসপাতালের পিসিআর পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ই-মেইলে তাঁর নমুনা প্রতিবেদন আসে। প্রতিবেদনে ওই সেবিকার করোনা পজিটিভ আসে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন মো. আখতারুজ্জামান জানান, ওই সেবিকার করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি জানার পরই রানীনগর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মেডিকেল টিমকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে ওই সেবিকার সংস্পর্শে আসা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনি অন্য যেসব মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন, তা যাচাই করার কাজ চলছে।
সিভিল সার্জন আরো জানান, ওই সেবিকা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডিউটির পাশাপাশি টিকাদান কর্নারেও দায়িত্ব পালন করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, ডিউটিতে থাকার সময় করোনা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ফলে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন, সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক।
রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, ‘ওই সেবিকা হাসপাতাল কোয়ার্টারে থাকেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং কোয়ার্টারে থাকা অন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক এলাকা অবরুদ্ধ থাকবে।’
এদিকে, সিভিল সার্জনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নওগাঁর ১১টির মধ্যে ১০টি উপজেলায় নতুন করে ১৩১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় তিন হাজার ৯৮৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে এবং ১৩ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৯৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের চারজনসহ মোট দুই হাজার ৮৩৬ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নয়জনের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকাসহ মোট কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন এক হাজার ১৬২ জন।
এরই মধ্যে নওগাঁ থেকে ৪৫৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রামেক হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বাকিদের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়নি এবং সবাই সুস্থ আছে।